আচ্ছা নিজের স্মৃতি শক্তির উপর কতটা বিশ্বাস আছে আপনার? আচ্ছা বাদ দিয়ে আপনার কথা. গণমানুষের স্মৃতিশক্তির উপর নিশ্চয়ই বিশ্বাস আছে অনেকটা. না না. ধর্মীয় কোন বিশ্বাস না. এই গ্রহে ঘটে যাওয়া এমন সব ঘটনা. যা সবাই জানে. তা কি রকম মিথ্যা?
এক দশক আগেও পৃথিবীর প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ জানতো যে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানীর নাম সিডনি. আসলে কি তাই? গত এক দশকে এই ধারণা মোটামুটি পরিবর্তন হয়ে মানুষ জেনেছে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানীর নাম ক্যানভেরা. এখনো এই ভুল হরমামেশাই করে যাচ্ছে মানুষ. বিশ্বাস না হলে আশেপাশের কিছু মানুষকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পারে.
প্রশ্ন করতে পারেন ম্যান্ডেলার নাম কেন? এই ফ্ললস মেমোরি সিন্ড্রোমকে ম্যান্ডেল এফেক্ট নামকরণ করেছেন প্যারানরমাল কনসালটেন্ট ফীয়না ব্রুম তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে । দু হাজার দশ সালের এক আলোচনা সভায় উঠে আসে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের নেতা উনিশশো আশি সালে কারা জানে মারা যাওয়ার প্রসঙ্গ । অনেকেই সেদিন বলেছিল, টিভিতে এই নেতার শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতা দেখার অভিজ্ঞতার কথা. ম্যান্ডেলার স্ত্রীর হৃদয় নিন্দারও ভাষণের কথা উল্লেখ করেছিলেন কেউ কেউ. এমনকি ফ্রিওনা ব্রুম নিজেও তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলেন. অথচ মজার বিষয় হলো নেলসন ম্যান্ডেলা উনিশশো আশি সালে কারাগারে মারা যাননি. বরং তিনি উনিশশো নব্বই সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে উনিশশো চুরানব্বই সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন. মারা যান চুরানব্বই বছর বয়সে এই তো সেদিন দু হাজার তেরো সালে. অনেক মানুষ সেদিন নিজেকে পাগল ভাবতে শুরু করে. এরপরেই বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন এমন বহু অভিজ্ঞতা যা ঘটেনি. অথচ বিশাল অংশের মানুষ তা বিশ্বাস করে বসে আছে. এরই নাম দেওয়া হয় ম্যান্ডেলা ইফেক্ট। কিন্তু কেন এমন ঘটে? এর ব্যাখ্যা কঠিন. শুধু কঠিন না, আপনাকে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যাতিত কিছুতে বিশ্বাস করতে হবে প্রায়. দুটো ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে. যার কোনটাই এখনো পর্যন্ত খুব একটা বিজ্ঞানসম্মত নয়.
এক. মাল্টি ব্যাস থিওরি বা প্যারালাল ইউনিভার্সিটি
দুই সাইকোলজিকাল এক্সপ্লেশন বা ফলস মেমোরি.
মাল্টি ভার্স থিওরির অর্থ ভিন্ন কোন ডেমেনশনে বিশ্বাস করা যা আমাদের ডাইমেনশনের সাথে সমান তরলে চলছে। এক্ষেত্রে আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে আমাদের টাইম লাইনের বাইরেও আলাদা এক বা একাধিক টাইমলাইন আছে যেখানে ক্ষনিকের জন্য এক বা একাধিক মানুষ একই সময়ে প্রবেশ করে. সেই স্মৃতি আমাদের মাঝে রয়ে যায়. যেই টাইমলাইনে আসলেই নেলসন ম্যান্ডেলা উনিশশো আশি সালে কারাগারে মারা গিয়েছিলেন.
প্যারালাল ইউনিভার্সের ধারণা যদিও ম্যান্ডেলা এফেক্টের অনেক আগের তত্ত্ব. তবে ম্যান্ডেলা এফেক্ট প্যারালাল ইউনিভার্সে বিশ্বাসীদের আরো জোরদার করে তুলেছে. সহজ কথা হলো আমাদের যমজ কোনো পৃথিবী আছে যা হুবহু আমাদের মতো । সেখানে ঠিক একদম আপনারই মতো কেউ এই ব্লগ পড়ছে আপনি হয়তো এই ব্লগের এতটুকু দেখেই নেক্সট বাটনে ক্লিক করলেন কিন্তু আপনার জমজ পুরো ব্লগটা দেখার সিদ্ধান্ত নিল.
এখানে আসে ইনফ্রেশন তত্ত্ব বা বিগ ব্যাঙেরই একটি সম্প্রসারিত অংশ. সম্পূর্ণ স্পেস ই প্রসারিত হচ্ছে. এবং অনন্তকাল ধরে তাই হতে থাকবে. এই প্রসারণের মাঝে স্পেসের কিছু অংশ প্রসারণ বন্ধ করে বাবলের রূপ নেয়। প্রতিনিয়ত এরকম অসীম সংখ্যক বাবলের জন্ম হচ্ছে যেগুলোর প্রত্যেকটি লেভেল এক মাল্টিভার্স.
এই ধারণা জোরদার করেছে লার্জ হার্ডেন কোলাইডারের প্রোটন কণার সংঘর্ষের মাধ্যমে ক্ষুদ্র বিগবন সৃষ্টির প্রচেষ্টা. Large, harden coliter নিয়ে আরেকদিন কথা হবে. বরং আমরা দ্বিতীয় ব্যাখ্যায় যাই.
ফলস মেমোরি হল একজন মানুষ কোন ঘটনা এমন ভাবে মনে রাখে যেটা আসলে কখনো ঘটেই নি. অথবা যেভাবে সে স্মরণ রেখেছে তার চাইতে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে রয়েছে. কিছু বিজ্ঞানীদের ধারণা ম্যান্ডেলা এফেক্ট হয কিছু পারিপার্শ্বিক ও মনস্তাত্ত্বিক কারণে. অনেক সময় মস্তিষ্ক কিছু মৃতি স্মৃতি তৈরি করে. যার ফলাফল এই ম্যান্ডেলা ইফেক্ট।
কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষের কেন একই মিথিস্থী l হবে তা ব্যাখ্যাতিত । এটা অনেকটা হ্যালুসিনেশের মতো. যা হাজার হাজার বা লক্ষ লক্ষ মানুষের সাথে ঘটে. যেমনটা ঘটেছিল যখন ডেভিড কভার ফিল হাজার হাজার মানুষের সামনে আকাশে উড়েছিলেন. বা স্ট্যাচু অফ লিভারটি সবার সামনে উধাও করে দিয়েছিলেন.
ফলস মেমোরি আপনার আমার সাথে হর হামেশাই ঘটে বলে ধারণা করা. বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট কোনো তথ্য বা সংবাদ ছড়িয়ে দিতে বিশাল ভূমিকা রাখে। এসব তথ্যের অনেকটাই সত্য আবার অনেকগুলোই মন গড়া । অনেক সময় নিজের অজান্তেই মানুষ এই সকল তথ্য যাচাই বাছাই না করেই গ্রহণ করে বসে । বেশিরভাগ সময় ভুল তথ্য আমাদের স্মৃতিতে এমনভাবে মিস ইনফরমেশন এফেক্ট সৃষ্টি করে আমরা ভেবে নিই এই বিষয়টি আমরা ছোটবেলা থেকেই এভাবেই জানতাম কিংবা এই ঘটনাটি ঠিক এভাবেই ঘটেছে ।
কোনো তথ্য যখন আমাদের কাছে নির্ভরযোগ্য মনে হয় বা এমন কারো কাছ থেকে কোনো তথ্য পাই সেটাকে সত্য ভেবেই নি । যার ফলে জন্ম নেয় ম্যান্ডেল ইফেক্টের. আমরা সেই তথ্য শেয়ার করেই নিজেদের পরিচিত মানুষজনের কাছে এটা পৌঁছয়. তারাও গ্রহণ করে. এভাবে একটা বিশাল জনসংখ্যার কাছে সহজেই পৌঁছে যায় অনলাইনের মাধ্যমে. গবেষণায় দেখা যায় বর্তমান সময় সত্তর ভাগেরও বেশি তথ্য মিথ্যা হিসেবে অনলাইনে ঘোরাফেরা করছে । এদের অনেকটাই ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়ানো হয় বিশেষ মহলের স্বার্থের জন্যে। বুঝতেই পারছেন এটা কতটা ক্ষতিকারক। অনলাইনে যাই দেখবেন বা যাই করবেন তা যাচাই বাছাই করে নেওয়াটাই কিন্তু সবচেয়ে উত্তম. সুতরাং দেখা যাচ্ছে ম্যান্ডেলা এফেক্ট খুব একটা সহজ ব্যাখ্যার বিষয় নয়. বিজ্ঞান এখনো হিমশিম খাচ্ছে এর ব্যাখ্যা দিতে ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন