সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ন্যানো টেকনোলজি কিভাবে কাজ করে ?

  যদি বলি আপনার চোখ দেখতে পারে না এমন গভীর ও প্রায় অনাবিষ্কৃত একটা পৃথিবী আছে. হয়তো বলতে পারেন যে মহাবিশ্বে কত গ্রহই তো আছে? সব খোঁজ কি আমরা পেয়েছি? কিন্তু যদি বলি আমাদের এই পৃথিবীর ভেতরে আরো একটি জগত আছে এবং যে জগৎ ছড়িয়ে আছে আমাদের গোটা বিশ্ব জুড়ে. এইবার হয়তো নড়েচড়ে বসবেন. হ্যাঁ আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে এমন এক রাজ্য যে আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না. এটাকে বলা হয় অণুবীক্ষণিক বিশ্ব. এই অণুবীক্ষণই বিশ্ব প্রচন্ড আকর্ষণীয় ও চমকে দেওয়ার মতো. কি কি ঘটছে এখানে তা আমার আপনার কল্পনারও বাইরে. এটা যেন কোনো ভিন গ্রহ বাসীদের রাজ্য. সম্ভাবনার দুয়ার খুলে রাখা আছে এই অণুবীক্ষণিক বা nano বিশ্বে.


 ন্যানো কি ন্যানো হলো পরিমাপের একক। এক মিটারের একশো কোটি ভাগের এক ভাগ হচ্ছে এক ন্যানো। আর ন্যানো টেকনোলজি হলো বিজ্ঞানের এই অতি ক্ষুদ্র স্তরে একটা কিছু তৈরী করা আসলে শুধু তৈরি করা না. ন্যানোমিটার স্কেলে পরিবর্তন, পরিবর্তন, ধ্বংস বা সৃষ্টি সম্পর্কিত টেকনোলজিকেই ন্যানো টেকনোলজি বলে. অর্থাৎ ন্যানোমিটার স্কেলে পরিমিত যেকোনো বিষয়ে বহুমাত্রিক টেকনোলজিকে ন্যানো প্রযুক্তি বা ন্যানো টেকনোলজি বলা যেতে পারে. কথা হচ্ছে কতটা ক্ষুদ্র স্তরে কাজ করে ন্যানো টেকনোলজি. 


 বর্তমান বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির সবচাইতে আশ্চর্যজনক নিদর্শন ন্যানো টেক. আমরা এমন এক পৃথিবীর সাথে পরিচিত যেখানে আমরা মিটার কিলোমিটার গ্রাম বা লিটার. এমনকি মিলিমিটার ইত্যাদি পরিমাপের সাথে অভ্যস্ত. কিন্তু এমন কোন জিনিসের আকার সম্পর্কে কল্পনা করাও কষ্টের যেটা এতটাই ছোট যে চোখে দেখা সম্ভব নয়. এক কাজ করুন. নিজের মাথা থেকে একটা চুল ছিঁড়ে আঙ্গুলে নিন. এখন এই চুলের ব্যস কত হতে পারে? খুবই কম. তাই না? এখন যদি বলি মানুষের চুল প্রায় এক লক্ষ ন্যানোমিটার ব্যাসবিশিষ্ট. বা একটা কলমের আকার দাগ প্রায় মিলিয়ান ন্যানোমিটার প্রশস্ত হয়. তাহলে হয়তো বুঝতে পারবেন কতটা ক্ষুদ্র এক ন্যানোমিটার. বলা হয় ভবিষ্যৎ পৃথিবী হতে যাচ্ছে ন্যানোটেকলজির রাজত্ব.  . ন্যানো টেকনোলজিতে তৈরি হচ্ছে অণুবীক্ষণে সব রোবট. যেগুলোকে ন্যানো বোর্ড বলা হয়. হার্ট কিংবা লিভার. যেটার ই হোক না সমস্যা. সেখানেই পৌঁছে যাবে ন্যানো রোবট.


 না কাটাছেঁড়া করে প্রবেশ করা নয় আপনার রক্তের প্রবাহে সাধারণ সিরিঞ্জের মাধ্যমে প্রবেশ করবে এই সব রোবট । দেবের চিকিৎসা তাহলে চিন্তা করুন টেকনোলজি কতটা ক্ষুদ্র স্তরে কাজ করছে কেন তা গুরুত্বপূর্ণ । কারণ পারমানবিক স্তরে বিজ্ঞানের কাজ করার অর্থ হলো পদার্থের পরমাণুগুলোকে নতুন করে সাজানোর একটা সুযোগ. আমরা সবাই জানি এই পৃথিবীর সবকিছুই পরমাণু দিয়ে তৈরি. আমরা যাই খাই যাই পড়ি আর যেখানেই বাস করি এমনকি আমাদের দেহ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সব কিছুই।  আর ন্যানো টেকনোলজিতে বদলে দেওয়া সম্ভব পদার্থের গঠন । আমরা সবাই লেগো ব্লগস এর সাথে পরিচিত  । যেভাবে লেগো ব্লগস খুলে পুনরায় বিভিন্ন ভাবে সাজানো সম্ভব একই ভাবে ন্যানো টেকনোলজিতে পদার্থের গঠন বদলে ফেলা সম্ভব । যা এক বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয় ও আমাদের মহাবিশ্বকে আরো ভালোভাবে জানার সুযোগ তৈরি করে দেয়. বিজ্ঞান এই ন্যানো সাইন্সের মাধ্যমে আমাদের বিশ্বকে একদমই নতুন আকার দিতে পারে. বদলে ফেলা সম্ভব পদার্থের গলনাঙ্ক বা স্ফুটনাঙ্ক বিদ্যুৎ বা চুম্বক পরিবাহকতা, রাসায়নিক বিক্রিয়া ইত্যাদি. সমুদ্রের নোনাপানিকে বদলে সুপেয়ো করে ফেলা সম্ভব. সম্ভব পানি থেকে আর্সেনিক নামক বিষ দূর করা. সুপীয় পানি নিয়ে যে আশঙ্কা ছিল ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে তা অনেকটাই কেটে যাচ্ছে ন্যানো টেকের কারণে. ন্যানো টেকনোলজির বেশিরভাগ সুবিধা হয়তো ভবিষ্যৎ কয়েক দশকের মধ্যে চোখে দেখতে পাওয়া যাবে. কিন্তু বর্তমানেও এই প্রযুক্তি নানান ভাবে আমাদের পৃথিবীকে পরিবর্তিত করতে সাহায্য করছে. আপনি হয়তো ভাবছেন ন্যানো টেকনোলজি একেবারে অসাধারণ জিনিস. এবং এটি সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তি. কারণ টেকনোলজি বলতে আমরা মানুষের তৈরি টেকনিক কি মনে করি? কিন্তু আমাদের জীবন নিজ থেকেই ন্যানো টেকনোলজির এক বিরাট উদাহরণ. আমাদের শরীরে প্রোটিন, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, কোষ ইত্যাদি ন্যানো টেকনোলজির সূত্রেই কাজ করে. আমাদের খাদ্যাভ্যাস বদলে দিতে পারে. ইতিমধ্যে তা শুরুও হয়ে গেছে. আপনার খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করার সাথে আরো স্বাস্থ্য সম্মত করে গড়ে তুলবে পুষ্টিগত দিক থেকে. যেমন খাদ্যের প্রয়োজন হবে অনেক কম লবণ বা চিনির পরিমান. অথচ স্বাদ থাকবে ঠিক আগের মতো. যাদের উচ্চ রক্তচাপ তাদের চিন্তা আর করতে হবে না মিষ্টি খেতে. বিভিন্ন খাদ্যজাত পণ্যের প্যাকেজিং ও প্রলেপ তৈরিতে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহৃত হচ্ছে । এটা জাস্ট একটা উদাহরণ. ন্যানো টেকনোলজিতে তৈরি কাপড়গুলোর তন্তু এতটাই সূক্ষ্ম যে এতে ধূলি, বালু কণা আটকে থাকতে পারে না. ফলে কাপড় অনেক কম নোংরা হয়. অনেক সানস্ক্রিন ক্রিমে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়. এতে ক্রিমটি আপনার স্কিনে লাগানো মাত্র এটি টাইটেনিয়াম অক্সাইড অথবা জিঙ্ক অক্সাইডের আস্তরণ ফেলে দেয়. ফলে এটি সূর্যের ক্ষতিকর আলট্রাভায়োলেট রশ্মিকে ব্লক করে ফেলে. এমনকি ন্যানো টেকনোলজির সাহায্যে বিভিন্ন কৃত্রিম অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তৈরি করা সম্ভব.


 ইলেকট্রনিক ডিভাইসে এই প্রযুক্তির কথা বলে শেষ করা যাবে না. আপনার হাতে স্মার্ট ফোন বা ল্যাপটপই আছে এই প্রযুক্তি. প্রসেসর দিন দিন উন্নত হচ্ছে. অথচ আরো কম বিদ্যুৎ বা ব্যাটারি খরচ করছে এই কারণে. হাতে স্মার্ট ফোন এখন স্ক্র্যাচ প্রুফ, ন্যানো টেকের কারণে.


 কম্পিউটার চিপ শব্দটি শুনে আমরা অভ্যস্ত. একটি কম্পিউটার শিপে ন্যানো টেকের কারণে এখন প্রায় দুই বিলিয়ন ট্রানজিস্টর অনায়াসেই এটে যেতে পারে. যার প্রতিটি এক একটি স্বতন্ত্র ট্রানজিস্টারের কাজ করে. চিন্তা করুন তাহলে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তিকে এই ন্যানো টেকনোলজি. এক সময় বিশাল কম্পিউটার এখন আরো অনেক বেশি দ্রুতগতির এবং কার্যকর ক্ষমতা নিয়ে আপনার চোখের কন্টাক্ট লেন্সে অবস্থান করতে পারছে অনায়াসে. শুরু হয়ে গেছে ফ্লেক্সিবল বা বাঁকানো সম্ভব ডিসপ্লে ফোনের বাজার. টিভির পর্দা হয়ে উঠছে ক্যালেন্ডারের পাতার মতোই পাতলা যাকে বলা হচ্ছে wallpaper টিভি.


 সব সম্ভব হয়ে উঠেছে. ওই যে ন্যানো প্রযুক্তির কারণে. শুধু তাই নয়. প্রতিদিন পৃথিবীতে বৃদ্ধি পাচ্ছে আবর্জনা. আশা করা যাচ্ছে ন্যানোটেক বিশাল ভূমিকা রাখবে পৃথিবীকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে । ন্যানো প্রযুক্তিতে কোন প্রকার কার্বন উৎপাদন না করেই আবর্জনা ধ্বংস করা সম্ভব. সম্ভব আরো সুনিপুন ভাবে সমস্ত আবর্জনা রিসাইকেল করা. এর ফলে ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে বায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করে অনায়াসেই কমিয়ে দেওয়া যাবে গ্রিনহাউস এফেক্ট.


 পরিবেশ হয়ে উঠবে আরো সুন্দর, আরো পরিচ্ছন্ন. শুধুমাত্র অনুর কাঠামোগত পার্থক্য হবার কারণেই কয়লা এত সস্তা আর হীরা এত দামি. এতদিন পর্যন্ত অনুপমানুর সংযোগ শুধুমাত্র রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমেই সংগঠিত হতো. ন্যানো টেকনোলজির মাধ্যমে অনুপরমাণুকে ভেঙে কিংবা জোড়া লাগিয়ে অনেক কিছুই করার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে.      ন্যানো টেকনোলজিতে কয়লাকে হিরায় পরিণত করা সময়ের ব্যাপার মাত্র. কিন্তু সাইড এফেক্ট থাকবে না তা তো আর হয় না. অবশ্যই আছে. সাইড এফেক্ট নির্ভর করছে কিভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এই প্রযুক্তি তার উপর. আপনার ব্যক্তিগত বলতে হয়তো তখন আর কিছুই থাকবে না এই ন্যানো টেকনোলজির কারণে । আমাদের দেহের মাঝে কিভাবে চিপ প্রবেশ করবে তা আমরা টেরও পাবো না. ডেটা ট্রান্সফার হতে থাকবে নিয়মিতভাবে আমাদের অজান্তেই. বদলে যেতে পারে সহজেই জীবনযাত্রা. ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে পরিস্থিতি. আপনার চলাফেরা দৈনন্দিন কাজকর্ম সহ প্রতিটা বিষয়ের খুঁটিনাটি চলে যাবে আরেকজনের হাতে. নিশ্চয়ই তা চাইবেন না আপনি. আসলে প্রযুক্তি দিন দিন উন্নত হচ্ছে তাতে আপনার বা আমার এই বিষয়ে কিছুই করার নেই. ন্যানো টেকনোলজি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের রাজত্ব শুরু হতে খুব বেশি দেরি নেই.     

মন্তব্যসমূহ

Blog Posts

মানসিকতার কয় টা দিক ? Personalities theory কী ?

     আপনি মানুষের সামনে খুব হাসিখুশি থাকেন বলেই মানুষ আপনাকে ভেবে নিল. আহ মানুষটা কি ভিল দরিয়া? মানুষটা খুব মিশুক. এক্সট্রোভার্ট।   কিন্তু আপনি আসলে ভেতরে ভেতরে উপলব্ধি করেন মানুষ আপনাকে যা ভাবে তা আপনি নন মানুষের সামনে হয়তো কোনোরকমে মানিয়ে নেন।  কিন্তু এত হাঙ্গামা আসলে আপনার পছন্দ নয় । আপনি আসলে নিজের ভুবনে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন নিজস্ব সার্কেলে । কিন্তু এমন কিন্তু এমনটা কেন? কিছু মানুষের ভেতরে দৈত সত্তা খুব বেশি কাজ করে. মনের ভেতর আর বাইরের উপস্থাপনার একটা দ্বন্দ্ব চলতেই থাকে. মানুষ আপনাকে যতটা introvert ভাবে মনে করে. কি ভাব? আপনি তেমন নাও হতে পারেন । আপনিও জোৎস্ই জায়গা পেলে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে এক্সপ্রেস করতে পারেন । এই যে দইতো একটা বৈচিত্র নিয়ে মানুষ বেঁচে আছে এটাকে তাহলে কি বলা যাবে? এই ধরণের মানুষগুলো আসলে এক্সট্রোভার্ট  আবার পুরোপুরি ইন্ট্রোভার্ট ও না ।  তারা মাঝামাঝি একটা অবস্থানে থাকে. এই মানুষগুলোকে বলা হয় হ্যান্ডবিভার. মজার ব্যাপার হল প্রচলিত একটা ধারণা আছে যে এক্সট্রোভার্টরা সেলস কমিউনিকেশানে খুব ভালো হয়. কিন্তু গবেষণায়...

এরিয়া ফিফটি one কি ?

এরিয়া ফিফটি ওয়ান  এটা এক অচেনা জগৎ. এখানে না আছে কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক, না আছে কোনো সুইট সাইন. নেই পিচ ছাড়া রাস্তা বা প্রাণের খুব একটা স্পন্দন। এমনকি বাইরের বিশ্বের সংস্কৃতি এবং সমাজের সামান্যতম বিস্তরণও নেই এখানে। এই নিরীহ নির্মম গোপন রহস্য আসলে কি তা জানার সুযোগ হয়েছে বলা চলে খুবই কম । কখনো কখনো বলা হয় এটা এলিয়ান গবেষণাগার. ইউএফও বা আন আইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্স নিয়েও নাকি প্রচুর গবেষণা করা হয়েছে. অনেকে ধারণা করেন যে একবারই স্থানে ঢুকলে আর বের হওয়া যায় না. বাইরের মানুষের কাছে একটা মিথ হয়ে রয়ে গেছে এই অঞ্চল. অন্তত এখনো পর্যন্ত. বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে গোপন ও সবচেয়ে রহস্যময় এলাকা এটি. নাম এরিয়া ফিফটি ওয়ান. শুরু থেকেই গোপনীয়তার দুর্ভেদ্য চাদরে মোড়ানো বলে এরিয়া ফিফটি ওয়ান নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হয়েছে দিনকে দিন । জমাট বাঁধা এই রহস্য থেকেই কালক্রমে জন্ম নিয়েছে বেশ কিছু কন্সপিরেসি থিওরি ।  আমেরিকার নেভা স্টেটের দক্ষিণে লাস ভেগাস থেকে একশো পঞ্চাশ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে পাহাড় গেরা মরুভূমির মধ্যে ঊনত্রিশ লক্ষ একর জায়গা জুড়ে আছে কুখ্যাত এবং বিদ্রুপজনক...

শিক্ষা শ্রম কি ? কিভাবে বের হতে পারা যায় এই অসুস্থ জগৎ থেকে ?

     এইতো কয়েকদিন আগের কথা. বিশ্বসেরা all rounder সাকিব আল হাসান সাংবাদিক উৎপল সুটের কাছে একটা ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন. পঞ্চপাণ্ডব  সহ আরো কিছু বিষয় সোজাসাপ্টা মন্তব্যের কারণে সেই সাক্ষাৎকার নিয়ে বেশ বিতর্ক হলো কিন্তু ক্রিকেট ও আলোচনা বা বিতর্কিত আলাপের বাইরেও সাকিব সেই সাক্ষাৎকারে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলেছিলেন যেটা নিয়ে বিন্দুমাত্র আলোচনা হয়নি । পরিবার আমেরিকাতেই স্থায়ী হবে এমন আভাস দিয়ে সাকিব বলেছিলেন বাংলাদেশে থাকার সময় স্কুলে যাওয়ার আগে আমার বড় মেয়ে অ্যালাইনা ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন কাঁদতো. অথচ আমেরিকায় এক ডাক দেওয়ার আগেই নিজে উঠে চোখ বন্ধ করে নিজে ব্রাশ করে স্কুলের জন্য রেডি হয়ে যায়. এর থেকে ভালো আমার জন্য আর কি হতে পারে?  সাকিব কেন নিজেকে একমাত্র পাণ্ডব বলে দাবি করেছেন সাকিবের বক্তব্যে অন্যান্য সিনিয়র প্লেয়ারদের অসম্মান করা হয়েছে কিনা এসবের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু কিন্তু এই কয়েকটা লাইনে লুকিয়ে আছে । স্কুল জায়গাটা কেন পাঁচ থেকে ছয় বছর বয়সের একটা বাচ্চা মেয়ের কাছে বিভীষিকার নাম হয়ে উঠবে.  এই গল্পটা শুধু এলাইনার নয়. এ...

স্কিল না সার্টিফিকেট? সার্টিফিকেটের দিন কি তাহলে শেষ হয়ে এল ? দেশে এত বেকার কেন ?

  একদিকে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে. অন্যদিকে চাকরিদাতারা বলছেন যোগ্য লোকের অভাব. আসলে বিষয়টা কি?  বেকার সমস্যা. বিশাল জনগোষ্ঠী, দেশ, বাংলাদেশের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুতর একটা সমস্যা. সমস্যাটা আরো গুরুতর যখন এই বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষিতের সংখ্যাই বেশি. বিআইডিএস এর এক জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বেকারত্বের হার চৌত্রিশ শতাংশ এবং স্নাতক পর্যায়ে এই হার সাইত্রিশ শতাংশ যুক্ত রাজ্যের প্রভাবশালী সময় কিনা ইকোনমিস্টের কলামেও বলা হয়েছে বর্তমানে বাংলাদেশের সাতচল্লিশ শতাংশ স্নাতকই বেকার. অর্থাৎ প্রতিবছর যদি বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর সহ উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে সারে তিন লাখ মানুষও বের হয় তবে তাদের প্রায় অর্ধেকই থেকে যাবে কর্মহীন।   কেন এত এত বিএসসি, এমএসসি, বিবিএ, এমবিএ, বিএ, এমএস সার্টিফিকেটধারী উচ্চশিক্ষিত তরুণ তরুণী দিন শেষে বেকার থেকে যাচ্ছে হ্যাঁ এটা সত্য যে চাকরি প্রত্যাশীদের বিপরীতে যথেষ্ট কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আমাদের দেশে নেই. কিন্তু আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষিতদের অনেকেই যখন বেকার তখন প্...

চীন কে ঠেকাতে আমেরিকার মহা পরিকল্পনা ? ইন্দো প্যাসিফিক ইকোনমিক ফেমোওয়ার্ক কি ?

  ইন্দো প্যাসিফিক ইকোনমিক ফেমোওয়ার্ক ফর পোস্ট প্রায়োরিটি বা সংক্ষেপে আইপিডিএফ অনেক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে এটিই হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বহুপাক্ষিক অর্থনৈতিক উদ্যোগ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পলিটিক্যাল ইকোনমিক বাজারে এই ধারণাটা খুব জোরালোভাবে আলোচিত হচ্ছে ।  জাপানে ইন্দো প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেম ওয়ার্ক নামে নতুন এই অর্থনৈতিক উয্যোগের ঘোষণার সময় জো বাইডেন খুব জোরে স্বরেই বললেন আমরা এর মাধ্যমে একুশ শতকের অর্থনীতির নতুন ধারা রচনা করতে যাচ্ছি ।  প্রশ্ন হচ্ছে ইন্দো প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেম ওয়ার্ক  বিষয়টা কি?  আগে কিছু বিষয় সম্পর্কে একটু ধারণা নেওয়া প্রয়োজন এটা খুব নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় এই অর্থনৈতিক উদ্যোগের কর্ণধার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র । তাই পুরো বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদের ইন্ডো প্যাসিফিক অঞ্চল এবং এই অঞ্চলকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব বুঝতে হবে.  প্রথমত বোঝা দরকার বৈশিক রাজনীতির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবটা কি? যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্ব রাজনীতিতে নিজেকে সুপার পাওয়ার হিসেবে দেখতে চায়.  মার্কিনীরা সবসময় চেষ্টা করে তার চেয়ে শক্তিশালী দেশের উত্থ...

দেযা ভু এফেক্ট কি ?

আচ্ছা এমনটা হয়েছে যে একদম নতুন কোনো জায়গায় প্রবল বৃষ্টিতে একটা ছাউনিতে আপনি আশ্রয় নিয়েছেন অথবা ধরুন কোথাও ট্যুরে গিয়ে আপনি আয়েশ করে বসে চা হাতে নিয়ে বই পড়ছেন । হঠাৎ আপনার মনে হলো এই জায়গায় আপনি আগেও ঠিক একইভাবে আটকে ছিলেন বৃষ্টিতে বা একই জায়গায় বসে চা হাতে বই পড়ছিলেন । অথচ বাস্তবে আপনি আগে কখনো এমন কিছু করেছেন বলে কিছুতেই মনে পড়ছে না কিন্তু ঘটনাগুলো এতটাই পরিচিত যে আপনি প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন মনে করার জন্য। হ্যাঁ এটাই দেযা ভু এফেক্ট ।  দেযা ভু এফেক্ট আমাদের সবার সাথেই কম বেশি হরহামেশাই ঘটে থাকে । ফরাসি এই শব্দের প্রথম প্রবর্তন করেন দার্শনিক এমএল বোরাক । যার অর্থ ইতিপূর্বে ঘটে গিয়েছে । এটি এমন একটি অনুভূতি যা থেকে মনে হতে পারে বর্তমানে ঘটতে থাকা কোন ঘটনা এর আগেও একই ভাবে অতীতে ঘটেছে। গবেষকদের মতে মোট জনসংখ্যার প্রায় সত্তর শতাংশের সাথে দেযা ভু এফেক্ট নিয়মিত ঘটে। অন্যান্য বয়সের তুলনায় পনেরো থেকে পঁচিশ বছর বয়সের মানুষের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে সবচেয়ে বেশি। না, এটি কোন রোগ নয় । একদম সুস্থ মানুষের সাথেও নিয়মিত এমন অভিজ্ঞতা ঘটতে পারে যারা অনেক বেশি ভ্রমণ করেন...

চীন কিভাবে সুপার পাওয়ার হয়ে উঠল ? চীন কিভাবে বিশ্ব অর্থনীতির জায়ান্ট হল ?

   সালটা উনিশশো আটানব্বই. বিশ্ব বানিজ্য সংস্থার সদস্য পদের জন্য আবেদন করে চীন।  তাদের জন্য বিষয়টা ঠিক এতটা সহজ ছিল না।  কারণ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ তখন চীনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়. এর অবশ্য কারণও ছিল. চীনা কোম্পানিগুলো বিখ্যাত ব্র্যান্ডের রিপ্লিকা ছাড়া আর কিছুই নয় বা নকলপূর্ণ বানায় এই বদনামে ছেয়ে গেছে তখন চারিদিক. চীন সরকার এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয় না.  সেই সময় চীনের পক্ষে দাঁড়িয়ে সেই দেশগুলোর রাগ ভাঙিয়েছিলেন তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিটন কিন্তু ক্লিটন যদি জানতেন বছর বিশেকের মধ্যেই বৈশিক অর্থনীতিতে তার দেশকে পেছনে ফেলে সুপার জায়ান্ট হবার দূরে এগিয়ে যাবে চীন। এই কাজটা হয়তো তিনি করতেন না কখনো. সেই সময় আমেরিকার অর্থনীতি ছিল নয় ট্রিলিয়ন ডলারের. আর চীনের অর্থনীতির মূল্যবান ছিল মাত্র এক ট্রিলিয়ন ডলার. নয় গুণ পিছিয়ে থাকা একটা দেশের সঙ্গে কোন প্রতিযোগিতাই নেই. এমনটাই হয়তো ভেবেছিলেন ক্লিটন। কিন্তু সেটা যে কত বড় ভুল ধারণা ছিল. সেটা এখন আমেরিকানরা জানে হাড়ে হাড়ে. ছোট্ট একটা ডেটা দিয়ে শুরু করা যাক. দু হাজার বিশ সা...

বাংলাদেশ কি তবে শ্রীলংকা হতে যাচ্ছে ? বাংলাদেশ কি তাহলে দেউলিয়া হবার পথে ?

শ্রীলংকার সরকার অবশেষে জানিয়ে দিয়েছে বিপুল পরিমান বিদেশি ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা তাদের নেই অর্থাৎ নিজেদের দেউলিয়া হিসাবে ঘোষণা করতে বাধ্য হলো দেশটি । এটা অবশ্য বোঝাই যাচ্ছিলো গত কয়েকদিনের প্রেক্ষাপট দেখে ধারণা করা যাচ্ছিলো দেউলিয়া ঘোষণা করা ছাড়া অন্য কোনো রাস্তা খোলা নেই শ্রীলংকার সামনে । তবে শ্রীলঙ্কার এই দুরাবস্থায় বাংলাদেশের নাগরিকদের অনেকেই বেশ চিন্তিত। বিপুল পরিমান বিদেশি ঋণের ভারে জর্জরিত হওয়াটা শ্রীলংকার আজকের অবস্থার একটা বড়ো কারণ। অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকান্ড চালাতে বাংলাদেশকেও প্রচুর বৈদেশিক ঋণ নিতে হচ্ছে. এখানে দুর্নীতি আছে আছে মুদ্রাস্ফীতি , জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে. আর তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক আছে. আজ থেকে কয়েক বছর পর বাংলাদেশের অবস্থাও শ্রীলংকার মতো হবে না তো? তার আগে আমরা ব্যাখ্যা করবো শ্রীলঙ্কার বর্তমান দুরাবস্থার কারণগুলো নিয়ে. জটিল কোনো রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক আলোচনা নয়. খুব সাদামাটা ভাবে আমরা বোঝানোর চেষ্টা করবো পুরো বিষয়টি. তাহলে শুরু করা যাক.  শ্রীলঙ্কায় গত কিছুদিন ধরেই জ্বালানি তেলের সংকট চলছে দারুণভাবে. রান্নার গ্যাসের অভাব. ভ...

মিনিমালিজম কি ? কিভাবে মিনিমালিস্ট হওয়া যায় ?

মিনিমামলিজম এই ধারণাটি বিগত কয়েক বছরে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং এর যথেষ্ট কারণও আছে. এই পুরো ব্যাপারটা কি? সেটাকে সঙ্গায়িত করা যায় এভাবে যে,  মিনিমালিজম হচ্ছে যা আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সেগুলোকে ধারণ করা এবং বাকি সব কিছু যা আমাদের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে নেয় সেগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে ত্যাগ করা।   অর্থাৎ কোন কোন বিষয়ে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কোন জিনিসগুলোকে আমাদের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান সেই সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা থাকা এবং বাকি সব ত্যাগ  করে দেয়. সেগুলো নিয়েই জীবন ধারণ করা. কিন্তু এমন সংজ্ঞায়ন সত্ত্বেও minimalism কোন ধরাবাধা জীবন ব্যবস্থা নয় বা মিনিমালিস্ট হতে হলে কোন নির্দিষ্ট মানদণ্ড মেনে চলতে হবে এরকমটিও কিন্তু নয়. মিনিমালিস্ট লাইফ স্টাইল এমন একটি বিষয় যা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য স্বতন্ত্র। এক্ষেত্রে মূল বিষয়টি হচ্ছে সত্যিকার অর্থে কোন কোন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সেই সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা নিয়ে সেই অনুযায়ী জীবন ধারণ করা. প্রিয় দর্শক চলুন দেখি মিনিমালিজম কিভাবে আপনার জীবনধারা বদলে দিতে পারে।  মিনিমালিস্ট জীবন অবশ...