সিকাডা থ্রী থ্রী জিরো ওয়ান
দু হাজার বারো সালের চৌঠা জানুয়ারি। ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ ডট ফোর চ্যান ডট কম নামের ওয়েবসাইটের বুলেটিন বোর্ডে ছবি সহ একটি ম্যাসেজ পোস্ট করা হয়. ওয়েবসাইটের নীতিমালা অনুযায়ী ছবি প্রকাশকারীর নাম পরিচয় গোপন রাখা হয়. অজ্ঞাত পোস্ট করি সেই ছবিতে ব্যবহারকারীদের চিত্রের মাঝেই লুকানো একটি বার্তা উন্মোচন করার জন্য চ্যালেঞ্জ জানান. সেই মেসেজটিতে লেখা ছিল হ্যালো আমরা অত্যন্ত বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের খুঁজছি তাদের খোঁজার জন্য আমরা একটা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি । এই ছবিতে একটা মেসেজ লুকানো আছে এটাকে খুঁজে বের করো । এটাই তোমাদের আমাদের কাছে নিয়ে আসবে. আমরা সেসব স্বল্প সংখ্যক ব্যক্তিকে দেখার অপেক্ষায় আছি যারা এটি সম্পূর্ণ করতে পারবে. Good luck । আর নিচে ছিল একটি কোড থ্রি থ্রি জিরো ওয়ান. পুরো ইন্টারনেট দুনিয়া তোলপাড় হয়ে গেল যেন হঠাৎ করে. পৃথিবীর সেরা হ্যাকার এবং কোড সমাধানকারীরা নিজেদের বুদ্ধিমত্তা প্রমানের জন্য এই পরীক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়লো আর এই রহস্যময় ধাঁধার নাম দেওয়া হলো সিকাডা থ্রী থ্রী জিরো ওয়ান।
সিকাডা অর্থ মত বা ঘুগরি পোকা. ছবি পোস্ট করার কিছুক্ষণের মাঝেই গুজব ছড়িয়ে পড়ল যে এটি কোন গোপন গোয়েন্দা সংস্থার কাজ হতে পারে. ক্রিপ্টোগ্রাফি, স্টেনোগ্রাফি এবং অন্যান্য সম্পর্কিত ক্ষেত্রে দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগের উদ্দেশ্যে. অবশ্য তখনও এটি গুজব ছাড়া কিছুই ছিল না. সারা বিশ্বের সব কোড সমাধানকারীরা ব্যস্ত তখন ছবি নিকট করতে কিন্তু কেউই কোনো ক্রিউ পায়না এই ধাঁধার সমাধান করা যেন অন্ধকারে ঢিল ছুড়ে এগিয়ে যাওয়া কারণ কেউ জানে না এর শেষ গন্তব্য কি ? কিংবা কারা অপেক্ষা করছে পর্দার ওপারে। অবশেষে ছবি প্রকাশের কিছুদিন পর জুয়েল এরিকসন নামের এক যুবক আবিষ্কার করেন যে এই ছবি টেক্সট এডিটর দিয়ে ওপেন করলে গোপনীয় ইনক্রিপটেড কিছু কোড পাওয়া যাচ্ছে । চলুন জুয়েল এরিকসনের সাথেই আগানো যাক এই ধাঁধার উন্মোচনের দিকে। শুরু হলো তার মাথা ঘামানো. শেষ স্টেনোগ্রাফি সফটওয়্যারের সাহায্যে এগিয়ে যায়. জুয়েল বলেন যে ঘটনাক্রমে আমি দু হাজার বারো সালে প্রকাশিত সেই সিকাডা থ্রী থ্রী জিরো ওয়ানের ধাঁধার সন্ধান পাই. দুর্ভাগ্যক্রমে আমি সবার থেকে পিছিয়ে ছিলাম কারণ আমি ছবি প্রকাশিত হওয়ার অনেক পরে একটি দেখতে পাই. প্রথম দিকে আমি ব্যাপারটা বেশ সহজ ভাবেই নিয়েছিলাম. যেন কোন সহজ ধাঁধার সমাধান করছি. কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা এত সহজ হবে না. আমি কখনো হাল ছেড়ে দিই নি.
সবসময় এমন কিছু চাইতাম যা আমার ঘাম ছুটিয়ে দেবে. তাই সিকাডা আমার জন্য খুব আকর্ষণীয় ছিল. যাই হোক. টেক্সট এডিটর দিয়ে ওপেন করার পর দেখা গেল কোডগুলো সাজালে অন্য আর একটা লিঙ্ক তৈরি হয়. jewel এরিকসন এর সেই লিঙ্কে ক্লিক করতেই তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো একটি হাঁসের ছবি এবং সেই সাথে একটি ইংরেজিতে লেখাপস এটা শুধুই ফাঁদ । মনে হচ্ছে তুমি ঠিক মতো ধারার সমাধান করতে পারোনি হতাশ না হয়ে আউট গ্যাস নামের এক স্টেনোগ্রাফি সফট্ওয়ারের মাধ্যমে জুয়েল এরিক্সন আবার শুরু করলেন মাথা ঘামানো। পেশায় ক্লিপোগ্রাফি গবেষক জুয়েল লেবার খুঁজে পেলেন আসল জিনিস. হাঁসের এই ছবির মাঝেই লুকোনো বেশ কিছু সংখ্যার সমন্বয়ে তৈরি এক নতুন ধাঁধা. কোড ব্রেক করে আবার পাওয়া গেল লিংক. এবার reddit ওয়েবসাইটে ঢুকে পড়লেন তিনি. সেখানে পড়লেন আরেক বিপদে. রেডিটের পুরো পেজ জুড়ে সব অদ্ভুত সাংকেতিক ভাষায় কিছু পোস্ট করা হয়েছে. শুরু হল আবার মাথা ঘামানো. এদিকে সিকাডা ফোরাম জমে উঠেছে বিভিন্ন ফ্যান ফিকশন. তাদের সাহায্য নিয়ে রেডিটের সেই পেজে পাওয়া গেল কিছু ক্লু। কিন্তু তা সমাধানের প্রয়োজন একটা বই।
সেই পেজেই আরো সব কোড ভেঙে দেখা গেলো বইয়ের নাম দ্য নবীন নোসিয়ান । সিকাডা ফোরামের অন্যান্য হ্যাকাররাও বইটি বের করতে সহায়তা করেছিল। এটি মধ্যযুগীয় কাব্যমালার সমন্বয় রচিত একটি পুস্তক। এরিকসন তার স্টেনোগ্রাফি নিয়ে কাজে লেগে গেলেন সেই কোড ডিকোড করতে। কিন্তু আবার বিপদ কারণ বার্তার মাঝে বেশ কিছু ধাঁধা লুকিয়ে আছে যার উত্তরে বেরিয়ে আসবে কিছু সংখ্যা । এবার পাওয়া গেলো একটা ফোন নাম্বারের অংশ এটি ছিল টেক্সাসের কারো নাম্বারের অংশ। জুয়েল এরিকসন টেক্সাসের ফোন সহায়িকা খেটে বেশ কয়েকটি সম্ভাব্য নাম্বারের তালিকা তৈরি করে সেগুলোতে ফোন দিতে থাকেন এক এক করে. এক সময় পাওয়া গেল কাঙ্ক্ষিত ফোন নাম্বার. কোনো মানুষ ধরেনি সেই ফোন রেকর্ড করা যান্ত্রিক কন্ঠে কেউ বলে ওঠে দারুন তুমি খুবই ভালো করেছো. এবার প্রথম ছবিতে ফিরে যাও. সেখানে আরো তিনটি প্রাইম নাম্বার লুকিয়ে আছে. তাদের একটা থ্রী থ্রী জিরো ওয়ান. বাকি দুটো তুমি খুঁজে বের করবে। এরপর তিনটি সংখ্যা একত্রে গুণ করে গুণফলের পরে ডট কম বসিয়ে চলে যাও তোমার পরবর্তী ধাঁধার জগতে. শুভকামনা, বিদায়. শুধু জুয়েলারিক্সও না. এমনকি কিছু প্রাইভেট মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাও এর সমাধান করতে লেগে গেছিল. ধাঁধা কি জন্য ছিল? এর পেছনে কে ছিল? শেষে পৌঁছলে কি হয়?
কেউই জানত না এর উত্তর. অনেকেই এটাকে নিছক রসিকতা হিসেবে মন্তব্য করেন. জুয়েল তখনও ব্যস্ত বাকি দুটো সংখ্যা খুঁজে বের করতে. স্টেনোগ্রাফি ফেল হলো এখানে. jewelry এর ভ্রু কুচকে গেলো কি মুশকিল ? এই ধাঁধার কি কোনো শেষ আছে? কিন্তু তিনি হাল ছাড়লেন না. যেহেতু স্টেনোগ্রাফি ব্যবহার করেও তিনি নতুন কিছু বের করতে পারলেন না. তাই তিনি সফটওয়্যার ব্যবহার ছেড়ে নিজের চোখে ছবি খানা পরখ করতে থাকেন. বেশ কিছুদিন পরক করার পর তিনি পরবর্তী দুটো সংখ্যা বের করার খুব সহজ একটা উপায় বের করলেন. মজার বিষয় হলো বাকি দুটো নাম্বার পাওয়া গেলো প্রথম ছবির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হিসাব করে. দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও three three zero one গুণ করে শেষে ডট কম লাগিয়ে যে web address পাওয়া গেলেও সেখানে একটা count down চলছিল. সাথে ছিল মথের একটি ছবি. জুয়েলা এরিকসন অপেক্ষা করতে থাকলেন কাউন্টডাউন শেষ হওয়া পর্যন্ত.
তারপর পুরো ওয়েবসাইটের চেহারা একদমই বদলে গেল. সেখানে চলে এলো বেশ কিছু সংখ্যা যা দেখে বোঝাই যাচ্ছিল কিছু স্থানের স্থানাংকের তালিকা. স্থানাঙ্ক গুলো বিশ্বজুড়ে পাঁচটি ভিন্ন দেশে চোদ্দটি অবস্থান দেখাচ্ছিল. স্পেন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং পোল্যান্ডের বিভিন্ন স্থান নির্দেশ করা আছে সেই স্থানাঙ্ক গুলোতে. কিন্তু এরিকশনের পক্ষে এতগুলো দেশ ভ্রমণ করা সম্ভব নয়. তাই তিনি সিকাডা সমাধানকারীদের নিজস্ব ব্লগে চোখ রাখতেন. এরিকসন জানতেন তিনি থামবেন না এতদূরে এসে. শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাবেন. অপরদিকে সিকাডা থ্রী থ্রী জিরো ওয়ান একটা সংগঠন বলে যারা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন তারা এবার নড়েচড়ে বসলেন. বুঝতে পারলেন এটা কোনো ট্রল নয়. একদমই অন্য কিছু. প্রচণ্ড মাথা খাটানো হয়েছে প্রতিটি কোড এ । কিন্তু জুয়েল তার হতাশা জানতে ভুললেন না. তিনি বললেন ফোরামে পুরো ব্যাপারটা খুব হতাশা জনক ছিল. বিশেষ করে যখন মানুষজন সমাধান বের করে অন্যজনকে জানিয়ে দিচ্ছিল. সবাই যেন মজার সাথে নিয়েছিল. এটা অত্যন্ত দুঃখজনক. আমরা অনেকেই নিজের প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছিলাম. তাই খুব বিরক্ত হয়েছিলাম. মানুষের বোকামিতে.
আস্তে আস্তে সিকাডা ফোরামে স্থানীয় সিকাডা সমাধানকারীরা প্রতিটি স্থানে একটা করে মথের পোস্টারের সাথে কিউআর কোড আবিষ্কার করে. শুরু করেন তার মাথা খাটানো. কিউআর কোডগুলো নিয়ে যায় একটা ছবিতে. সেই ছবিতে আবার ধাঁধা. ধাঁধার সমাধান নিয়ে যায় আর একটি বইয়ে. সেই বই থেকে আরেকটি ওয়েবসাইটে. কিন্তু সেই লিঙ্কে প্রবেশ করতে প্রয়োজন টর ব্রাউজার. যারা যারা ডিপ ওয়েব ডার্কওয়েব সম্পর্কে হালকা একটু জানেন তাদেরই টর নেটওয়ার্ক সম্পর্কে শোনার কথা. টর র্নেটওয়ার্কে আপনার অনলাইন পরিচয়কে ছদ্মবেশে বিভিন্ন টর্চ সার্ভার দিয়ে ইনফেকশান করিয়ে তারপরে সেই ট্রাফিককে নির্দিষ্ট স্থানে পাঠানো হয়. ফলে আপনার পরিচয় ট্র্যাক করা অসম্ভব হয়ে পরে. মাথা খারাপ হওয়ার মতো অবস্থা. তবে এখানে ধাঁধাটি একটি অপ্রত্যাশিত মোড় নেয়. কারণ প্রথম কয়েকজন ধাঁধা সমাধানকারীদের খুঁজে পাওয়ার পর বাকি সবার প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দিয়েছে তারা. একটা বার্তা দিয়ে সাইটটি বন্ধ করে দিয়েছে তারা.
আমরা অনুসরণকারীদের নয় সেরাকে চাই. চূড়ান্ত প্রার্থীদের অন্যদের সাথে পাজলের ফাইনাল স্টেজের কিছু শেয়ার করতেও নিষেধ করা হয়. সময়ের সাথে হেরে যান জুয়েল এরিকসন. প্রায় এক মাস নিরবতার পর রেডিটে ধাঁধাটির সমাপ্তি ঘোষণা করে একটি ছবি পোস্ট করা হয়. সেখানে লেখা ছিল হ্যালো আমরা যাদের খুঁজছিলাম তাদের পেয়েছি আর এখানেই শেষ হচ্ছে আমাদের জার্নি এখন ধন্যবাদ সবাইকে তাদের চেষ্টার জন্যে যারা টেস্ট কমপ্লিট করতে পারেননি বা আমাদের থেকে কোনো ইমেইল পাননি তারা হতাশ হবেন না আরো সুযোগ আসবে ধন্যবাদ সবাইকে থ্রী থ্রী জিরো ওয়ান। দীর্ঘ একুশ দিন যাবত তার সিকাডা যাত্রার তাই এখানেই যবনিকা পাথ হয় । এখানে অনেকেই ব্যাখ্যা দেয় যে ধাঁধাটি সবার সময় নষ্ট করা রসিকতা ছাড়া আর কিছুই ছিল না কিন্তু প্রশ্নগুলো উত্তরহীন রয়ে যায়. দেখে মনে হচ্ছিল এখানেই সব শেষ. কিন্তু কে জানতো এটা কেবল শুরু মাত্র. এরিকসন বিফল হলেও যারা টরের লিংকে ঢুকতে পেরেছিলেন তাদের মাঝে একজনের নাম টেকনো লগি। তিনি সিকাডা ত্রি থ্রি জিরো ওয়ানের রহস্যটা খুলতে সক্ষম হয়েছিলেন.
চলুন এবার যাওয়া যাক তার সাথে. এরিকসন না পারলেও অনেকেই সেই টর ব্রাউজার লিংকে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন. প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের সেই একজন হলেন টেকনো লগি নামের এক ছাত্র. এই নাম ব্যবহার করে তিনি সিকারা থ্রি থ্রি জিরো ওয়ানের রহস্যজন খুলতে সক্ষম হয়েছিলেন. । টর্ ব্রাউজারের সেই লিঙ্কে প্রবেশ করার পর নতুন ছবির ধাতার সন্ধান পাওয়া যায়. সেই ছবিতে সিকাডা থ্রী থ্রী জিরো ওয়ান একটি বইয়ের কথা ইঙ্গিত করেছিল. সেটি হচ্ছে উইলিয়াম ব্ল্যাক রচিত দ্যা ম্যারেজ অফ হেভেন এন্ড হেল্প. সেখান থেকে সহায়ক চাবি বের করে তিনি আরেকটি টর ব্রাউজার লিংকের সন্ধান পান. সেখান থেকে আরো কোড ডিকোড করার পর তাকে সিকাডা থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এই কোডটি একটি নির্দিষ্ট জিমেল ঠিকানায় প্রেরণ করতে হবে. তিনি তাই করার পর তাকে সুসংবাদ প্রেরণ করা হলো. আর কোন ধাঁধা নেই. তুমি বিজয়ী হয়েছো. তারপর কি হল? সেটা একটু পরে বলছি. এই জটিল খেলার পেছনে যে ছিল সে সব সময় প্রতিটা ছবি বা ধাঁধায় একটা ডিজিটাল সিগনেচার জড়িয়ে দিতো ফলে ব্যবহারকারীরা সহজেই বুঝতে পারতো যে আসলেই তা সিকাডার কাছ থেকে এসেছে কিনা। সিকাডা হারিয়ে যাওয়ার ঠিক এক বছর একদিন পর এমনই আরেকটা ছবি আবার পোস্ট করা হয়। এটার ডিজিটাল সিগনেচার জানান দেয় তা সিকাডা থেকেই এসেছে. আবার তোলপাড় হয় ইন্টারনেট দুনিয়া. নেশার মতো লেগে যায় মানুষ. রহস্যের খোঁজে. দ্বিতীয় ধাঁধাটি প্রথম থেকে খুব একটা আলাদা নয়. ছবি থেকে কোড, কোড থেকে বই, বই থেকে লিঙ্ক আস্তে আস্তে পাজল খুলতে শুরু হয় আগের মতই. একসময় সেই রেকর্ডিং এবার পার্থক্য হলো ইন্সট্যান্ট ইমার্জেন্স নামের একটি মিউজিক ফাইলে থাকে কোড। আরেকটি ক্লু একটা ইনক্রিপটে টুইটার একাউন্টে নিয়ে যায় সেখানে পাওয়া যায় একটা ছবি এটাতে ছিল রুনিক বর্ণমালায় লেখা কিছু বেশ কিছু সময় ব্যবহারকারীরা এখানে থমকে থাকে। তারা একসময় সফলও হয় কোড ভাঙ্গতে পাওয়া যায় আবার কিছু স্থানের স্থানাঙ্ক এর তালিকা. আবার কিছু পোস্টার. এবার ছিল চার দেশের আট জায়গা.
কিন্তু আবারো প্রথম কয়েকজন ধাঁধা সমাধানকারীদের খুঁজে পাওয়ার পর বাকি সবার প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয় তাঁরা। কিন্তু প্রথমবারের মতো রেডিটে ঘোষণা দেওয়া হয় না এবার. একদম উধাও হয়ে যায় তারা. কিন্তু এখানেও শেষ নয়. দু হাজার চোদ্দ সালে আসে তৃতীয় রাউন্ড। সেই একই ছবি বই কোড। কিন্তু এইবার দেখা গেল পাজেল একটা বইকে কেন্দ্র করে করছে. বইটির নাম ছিল লিভার প্রাইমাস. যার অর্থ প্রথম বই. লেখক কে জানেন? সিকাডা স্বয়ং। বইটা লেখা রুনিক ভাষায় প্রতি পদে পদে ইনকোড করা বিভিন্ন দার্শনিক ও আদর্শিক ধারণা । কিন্তু এবার বেশিরভাগ লিঙ্কই ছিল রেফারেন্স। রুনিক ভাষায় লেখা সেই বইয়ের বেশিরভাগ কোড এখনো ভাঙা সম্ভব হয় নি। দুই হাজার পনেরো সালে কোনো ছবি পোস্ট না করলেও দুহাজার ষোলো সালে লিভার প্রাইমাস বইয়ের কোড ভাঙার অনুরোধের একটা ছবি পোস্ট করে তারা । এরপর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি তাদের প্রশ্ন রয়ে যায় ধাঁধা কি জন্য ছিল ? এর পেছনে কে ছিল? শেষে পৌঁছলে কি হতো? প্রথম ধাঁধা শেষে চূড়ান্ত প্রার্থীরা এই email টি পেয়েছিলেন বলে মনে করা হয়.
যার সারমর্ম ছিল আমরা একটি আন্তর্জাতিক সংঘ, যাদের কোনো নাম, চিহ্ন কিংবা পরিচয় নেই. আমাদের সদস্যদের কোনো তালিকাও আমরা তৈরি করিনি. আমাদের কোনো বিজ্ঞাপন নেই. তোমরা হয়তো ভাবছো আমরা কি করতে চাচ্ছি? শুধু এটুকুই বলবো আমরা তোমাদের মতো মেধাবী এবং চিন্তাবিদ. আমরা ইন্টারনেট মুক্তিতে বিশ্বাস করি. আমরা কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছি এবং তোমরা সম্মতি প্রদান করলে আমাদের পরবর্তী প্রকল্পের অংশীদার হতে পারবে. এই ইমেলে সিকাডা তাদের একটি আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী হিসেবে প্রকাশ করে. তারা বিশ্বাস করে যে গোপনীয়তা একটি অবিচ্ছেদ্য অধিকার. প্রতিটি ধাঁধার উদ্দেশ্য হলো পৃথিবীতে গোপনীয়তা বিষয়ক সমস্যাগুলোর সমাধান করার প্রচেষ্টায় সম্ভাবনা ব্যক্তিদের নিয়োগ করা. বিজয়ীদের সম্ভবত ডাক কুয়োপের মাধ্যমে সিকাডার সংঘের সাথে বৈঠক ও নিয়োগ দেওয়া হয়. দু হাজার পনেরো সালে রোলিং স্টোনকে দেওয়া প্রথম ধাঁধার দুই তথাকথিত বিজয়ী একটি সাক্ষাৎকারে বলেন যে তাদের ডাক ওয়েবের একটি ফোরামে নেওয়া হয়েছিল. তাঁরা বলেন সেখানে বেশ কিছু লোক ছিল.
আমি জানি না তাঁরা কারা কিংবা কি চায়। সবকিছুই কেমন যেন অদ্ভুত লাগছিল তারা যা বলছিল তা আমরা নিজেরাও ভালোমতো বুঝতে পারছিলাম না. এখানে তাদের কিছু অদ্ভুত প্রশ্ন করা হয়. তাদের বলা হয় আমরা ইন্টারনেট মুক্তিতে বিশ্বাস করি. আমরা কিছু প্রকল্প হাতে নিয়ছি. এতে হতাশ হয়ে ওই দুজন সরে আসেন. পরে সেখানেও তাদের সাথে আর যোগাযোগ করেনি. কিন্তু আরও যারা বিজয়ী ছিল তাদের পরিচয় কেউই জানে না. একটি গোপন সংস্থার ক্ ক্রিপ্টোগ্রাফি ধাঁধা দিয়ে নিয়োগের ধারণাটা কিছুটা অযৌক্তিক বা এমনকি ষড়যন্ত্রমূলক মনে হতে পারে. কিন্তু এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন নয়. ইউএস নেভি ও ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা জিসিএইচ কিউ এর এমন ইতিহাস আগেও ছিল. সিকাডার থ্রি থ্রি জিরো ওয়ান ইন্টারনেটের জগতে অন্যতম এক বিস্ময় হয়েই রয়ে গেছে এখনো. এই ধাঁধার সূত্রপাত ইন্টারনেটে হলেও এর কার্যক্রম কিন্তু পরিচালিত হয় টেলিফোনে সংগীতে অপ্রকাশিত এবং দুষ্প্রাপ্য কিছু বইতে। ডিজিটাল ছবি এমনকি বিভিন্ন জায়গায় ছাপানো কাগজের মাধ্যম । কিন্তু এর সবটাই লুকানো হয়েছে এনক্রিপশন এবং এনকোডিং করে। এই ধাঁধার সিরিজ গুলো শুধুমাত্র কম্পিউটারে বসে সন্ধান করা যাবে না। এর জন্য প্রতিযোগীকে যেতে হবে বিভিন্ন জায়গায়. এর পেছনে কারা আছে? কি তাদের উদ্দেশ্য কিংবা কেন? তাঁরা হঠাৎ করে চুপ হয়ে যায়. এসব প্রশ্নের উত্তর কারো জানা নেই. আবার কি ফিরে আসবে তাঁরা? নতুন কোন পাজেল নিয়? কে জানে?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন