সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মারিয়ানা ট্রেঞ্চ কি ?

গুটঘুটে অন্ধকার, কনকনে ঠান্ডা আর জলের চাপ হলো আট টন। অর্থাৎ প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে প্রায় পনেরো হাজার সাতশো পঞ্চাশ পাউন্ড। অবাক করা বিষয় হলো এখানেও প্রাণের অভাব নেই। এখানকার বাসিন্দারা সংখ্যায় যেমন অনেক তেমনি বৈচিত্রেও কম নয়। কোনটি দেখতে অতীব বীভৎস আবার কোনটি বিষ্ময় জাগায় । অথচ এই গভীরতম বিন্দুর রহস্য এখনো অনেকটাই ভেদ করা সম্ভব হয়নি। পৃথিবীর গভীরতম স্থান মারিয়ানা ট্রেন্স। 

এতটাই গভীর যে আপনি যদি মারিয়ানা ট্রেন্সের নিচে আস্ত মাউন্ট এভারেস্ট স্থাপন করেন তবুও মাউন্ট এভারেস্টের শিখর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাত হাজার ফুট নিচে থাকবে। মারিয়ানা ট্রেন্সের সম্পর্কে আজও পুরোটা জানা সম্ভব হয়নি বলেই পৃথিবীর মানুষের কাছে আকর্ষণীয় ও বিস্ময়কর স্থান এটি।  বহু মিথ আছে একে ঘিরে। যার বেশিরভাগই অপমানি।.  


মারিয়ানা আইল্যান্ডসের সবচেয়ে বড় দ্বীপ গোয়া। এখানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খুবই শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটি। মারিয়ানার আর একটি দ্বীপ তিনিয়ন। উনিশশো পঁয়তাল্লিশ সালে এখান থেকেই জাপানে বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ষোলশো আটষট্টি সালে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম দিকে দ্বীপপুঞ্জে কলোনি স্থাপন করে স্পেনীয়রা । তারা স্পেনের রানী মারিয়ানা অফ অস্ট্রিয়ার নাম দিয়ে দ্বীপের নামকরণও করে মারিয়ানা আইল্যান্ড। তবে তারা কখনো কল্পনাও করতে পারেনি এই দ্বীপগুলোর পূর্ব পাশের জায়গাটি পৃথিবীর গভীরতম স্থান। সেই দ্বীপুঞ্জের নামেই রাখা হয়েছে মারিয়ানা ট্রেন্সের নাম। এখানকার সবচেয়ে গভীর অংশটির নাম চ্যালেঞ্জের টিপ। চ্যালেঞ্জের টু নামক একটি জাহাজের নাবিকেরা উনিশশো আটচল্লিশ সালের পৃথিবীর গভীরতম এই বিন্দু আবিষ্কার করে। বিজ্ঞানীদের মতে এই স্থান প্রায় এগারো কিলোমিটার গভীর। যদিও বিজ্ঞানীরা এখনো জোর গলায় বলতে পারছেন না যে এটি আসল গভীরতা। মারিয়ানা ট্রেন্সের সৃষ্টি হয়েছে tectonic প্লেটের সংঘর্ষের কারণে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটের সঙ্গে ফিলিপিন প্লেটের সংঘর্ষের ফলে বিশাল আকৃতির প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট ফিলিপিন ফ্লেটের নিচে চলে আসে। আর এভাবেই প্রশান্ত মহাসাগরের তলবে সে জন্ম নেয় এই গভীর খাত। সেই হিসেবে মারিয়ানা খাতের বিস্তার তুলনামূলক অনেক কম। উত্তর পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রায় দুহাজার-পাঁচশো-পঞ্চাশ কিলোমিটার ধরে বিস্তৃত।

 সমুদ্রে এক হাজার মিটারের পর থেকে আর আলু পৌঁছায় না। ফলে চ্যালেঞ্জের দ্বীপ অংশটিতে পানির তাপমাত্রা এক থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। পানির অতিরিক্ত চাপের কারণে চ্যালেঞ্জার দ্বীপ যেকোনো মানুষের জন্যই বিপদজনক জায়গা। এখানে সাধারণ সাবমেলিন চলতে পারে না। মাউন্ট এভারেস্ট জয় করা যেমন দুঃসাধ্য তার চেয়েও কঠিনbচ্যালেঞ্জের দ্বীপের গভীরতম বিন্দু পর্যন্ত যাওয়া।মাউন্ট এভারেস্ট এখনো পর্যন্ত অনেকেই জয় করেছেন। কিন্তু চ্যালেঞ্জের দ্বীপের গভীরতম বিন্দুতে এখনো পর্যন্ত চারবার অভিযান চালিয়েছে মানুষ। উনিশশো ষাট সালে ইউএস নেভির লেফটেন্যান্ট ডং ওয়েলফ ও জ্যাকটু স্পিকার প্রথম ম্যারিইয়ানা ট্রেন্সের তলায় অবতরণ করেন। এরপর উনিশশো ছেষট্টি ও দু হাজার নয় সালে দুবার মানুষ অবতরণ করেছে ভয়ঙ্কর এই স্থানে । 

দু হাজার বারো সালে বিখ্যাত জেমস ক্যামেরা এখানে অবতরণ করেন।  তার ভাষ্য মতে চাঁদ জয় করার চেয়েও কঠিন মানিয়না ট্রিঞ্চের তলদেশে যাওয়া। তবে সম্প্রতি আরেক অভিযাত্রী ভিক্টর ভিস্কোপও পৌছেছেন দশ হাজার নশো সাতাশ মিটার পর্যন্ত।  যা এখনো রেকর্ড হিসেবে আছে। এই গভীর সমুদ্রের তলদেশে কি আছে? সে বিষয়ে একটু পরে আসছি। ছাব্বিশে মার্চ দু হাজার বারো সালে ডিপসি চ্যালেঞ্জের নামের এক সবুজাভ হলুদ রঙের সাবমার্সিবলে করে মালিয়ানা ট্রান্সের গভীরে যাত্রা শুরু করেন জেমস ক্যামেরা। যাত্রা শুরুর আড়াই ঘন্টা পর দশ হাজার আটশো আটানব্বই মিটার গভীরতায় পৌঁছান তিনি। তখন এটা ছিল বিশ্ব রেকর্ড. তিনি সমুদ্রের গভীরতম অঞ্চলে পৌঁছেছিলেন। 

ভাগ্যক্রমে আমাদের দেখার জন্য তিনি ডুব দিয়ে ছিলেন থ্রিডি হাই ডেফিনেশন ক্যামেরা সহ। দু হাজার চোদ্দ সালে মুক্তি পায় এই নিয়ে documentary DC challenge। আর এতেই দেখা যায় যে সমুদ্রের গভীরতম স্থানেও প্রাণের উল্লেখযোগ্য অস্তিত্ব বিদ্যমান। হতে পারে মারিয়ানা খাত পৃথিবীর সবচেয়ে অনাবিষ্কৃত সীমান্ত। মারিয়ানা  খাদের নিচে হিমশিতল জলে যেখানে কোনো আলো নেই এবং ভয়ঙ্কর চাপ তবুও তার জীবন কিভাবে সহ্য করে এটা জানার জন্য বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা ব্যস্ত হয়ে আছেন। সাধারণত সংযোগস্থলের গভীরে মৃত প্রাণীর কঙ্কাল খোলস জমা পড়তে থাকে । মারিয়ানার তলও আলাদা নয়। এখানকার জলের রং সেজন্যই খানিকটা হলুদ। কখনো হাইড্রোজেন সালফাইট সহ বিভিন্ন ধরনের খনিজ সমৃদ্ধ গরম পানিও বের হয় চ্যালেঞ্জার দ্বীপের ছিদ্রপথ দিয়ে। এগুলো প্রভাব খাদ্য, ব্যারো ফিলিক জাতীয় ব্যাকটেরিয়া। এসব ব্যাকটেরিয়াকেই আবার খেয়ে বাঁচে অণুবীক্ষণিক যন্ত্র দিয়ে দেখতে হয়। এমন কতগুলো ছোট ছোট জীব. এদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে মাছেরা। 


এভাবেই সাগরের ওপরের মতো সাগরের তলেও এতো গভীরে জীবনের চক্র কিন্তু ঠিকই চলতে থাকে। এখানে বেঁচে থাকার যুদ্ধের প্রথম অন্তরায় হলো গাঢ় অন্ধকার। বেশিরভাগ মাছই চোখে দেখতে পায় না এখানে। ড্রাইভ ফিশ নামের মাছের নামকরণ করা হয়েছে এর বিশাল ডানার জন্য। এরা তাদের ডানা মাটিতে পায়ের মতো ব্যবহার করে। সাথে শিকার বোঝার জন্য স্পর্শ এবং কম্পনের ওপরও নির্ভর করে এই মাছ। আবার অনেক মাছ আছে যাদের নিজস্ব আলো রয়েছে। এই আলো বায়োলিউমিনেশনস নামে পরিচিত। ল্যান্ডটন ফিশ বা এই জাতীয় মাছেরা এই আলোকে হেডলাইটের মতো ব্যবহার করে। শিকার কে আকর্ষণ করার জন্য তারা এই আলো ব্যবহার করে। অন্ধকার এরপর দ্বিতীয় সমস্যা তৈরি করে। সূর্যের আলোর অভাব মানে খাদ্য শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কোন শ্যাওলা বা গাছপালা নেই। ফলে স্বাভাবিকভাবেই খাবারের অভাব হওয়ার কথা। ফলে সমুদ্রের ওপরের স্তর থেকে মৃত প্রাণীর ক্ষয়িষ্ণু বর্জ্যের উপর নির্ভর করেই তাদের বেঁচে থাকতে হয়। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন যে ফ্রিঞ্চের গভীর পানির টানে এই বর্জ্যগুলো আরো বেশি করে তলায় পৌঁছায়। ফলে একটা অদ্ভুত ইকোসিস্টেম তৈরি হয়েছে এত গভীরে। 

আবার মাঝে মাঝে তিমির মতো বিশাল প্রাণীর মৃতদেহ অনেক বেশি খাদ্যের সঞ্চালন করে এইখানে। হ্যাকফিসের মতো মাছেরা এইসব মৃতদেহের ভেতর থেকে খাওয়া শুরু করে। আর বোনসওয়ানরা হাড় গায়েব করে দেয়। তৃতীয় সমস্যা হলো সমুদ্রের শারীরিক বৈশিষ্ট্য যা বেঁচে থাকা আরো মারাত্মক করে তোলে। এই স্থান হিমশিতল। বেশিরভাগ জায়গায় তাপমাত্রা minus এক এবং চার ডিগ্রি সেট্রিগেটের মধ্যে থাকে  । সবচেয়ে খারাপ সমুদ্রের পানির প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে আট টন পরিমান ছাপ যা সমুদ্রে পৃষ্ঠের চেয়ে এক হাজার গুণ বেশি। এ যেন এক ফ্রিজারে পিষে মরবার মতোই অবস্থা। চাপ এবং শীতের এই সংমিশ্রণ প্রাণীর দেহে অদ্ভুত প্রভাব ফেলে। তাদের দেহের কোষগুলো চর্বিযুক্ত ঝিল্লি দ্বারা বেষ্টিত থাকে ।  এই ঝিল্লি গুলো ঠান্ডায় ফ্রিজের মাখনের মতো শক্ত হয়ে আসতে চায়। কিন্তু কঠিন আস্তরণ দেহে থাকলে প্রাণীরা কম্পন বুঝতে পারবে না। ফলে অবশ্যই দেহের আস্তরণকে নরম রাখতে হবে। তারা কত বছর ধরে এই অবস্থাতে খাপ খাইয়ে নিয়েছে তা কিন্তু একটা বিস্ময়কর ব্যাপার। সিকিউকাম্বার নামের এই প্রাণীগুলোকে দেখে নিশ্চই তা বুঝতে পারছেন? এখানকার ব্যাকটেরিয়া জিনগুলো দেখায় যে তাঁরা সালফার এবং কার্বন ডাই অক্সাইড খেয়েও বেঁচে থাকতে পারে।



 আবার কেউ কেউ মিথেন এবং হাইড্রোজেনের মতো গ্যাসের উপরও নির্ভরশীল. প্রাণের শুরু হয়েছিল কিভাবে তা মারিয়া ট্রেন্সের ব্যাকটেরিয়া আমাদের বুঝতে সাহায্য করতে পারে. অন্য গ্রহের জীবনের অস্তিত্ব কোথায় পাওয়া যেতে পারে তা নির্ধারণ করতেও তারা আমাদের সহায়তা করতে পারে। বৃহস্পতির অন্যতম উপগ্রহ ইউরোপের সাথে এই অঞ্চলের দারুন মিল রয়েছে ইউরোপ আর বরফের নিচে পৃথিবীর চেয়ে দ্বিগুণ পরিমান জল রয়েছে। একটি লোকানো তরল সমুদ্র রয়েছে বলে মনে করা হয়। জেমস ক্যামেরার ম্যালেরিয়া ট্রেন্স থেকে ফিরে এসে বলেছিলেন যেন অন্য কোন গ্রহ থেকে ঘুরে এলাম আমি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে জলের নিচের সব তথ্যও একদিন জানবে মানুষ। জয় করবে সমুদ্রের নিচের রাজ্য. তখন নিশ্চই অনেক দুঃসাহসী অভিযাত্রী মারিয়ানা ট্রেনে ছুটবেন পৃথিবীর গভীরতম স্থানে অবতরণ করা রোমাঞ্চকর অভিযানের হাতছানিতে। শেষে একটা দুঃসংবাদ দিই. আঠারোই সেপ্টেম্বর দু হাজার উনিশ সালে অভিযাত্রী ভিক্টর রেস্কোভার অভিযাত্রায় উঠে  এসেছে এই সংবাদ. দূষণের হাত থেকেও রেহাই পায়নি এই গভীর বিন্দু. এখানেও পাওয়া গেছে প্লাস্টিক।   

মন্তব্যসমূহ

Blog Posts

লুসিড ড্রিম কাকে বলে ? লুসিড ড্রিম কিভাবে দেখতে হয় ?

 স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ করার কথা ভেবেছেন কখনো? নিশ্চয়ই ভাবছেন জেগে জেগে দিবাস্বপ্ন দেখার কথা বলছি না তো? কিন্তু না, রীতিমতো ঘুমিয়ে দেখা স্বপ্নও নিয়ন্ত্রণের কথাই বলছি, আপনার ইচ্ছামত স্বপ্ন দেখবেন। ইচ্ছা মতো নিয়ন্ত্রণ করবেন। আর পছন্দ না হলে অর্থাৎ দুঃস্বপ্ন দেখা শুরু করলে সেটার গতিপথ পাল্টে দেবেন একেবারে নিমেষে। আধুনিক বিজ্ঞানের ভাষায় এটা খুবই সম্ভব একে বলা হয় লুসিভ ড্রিম। লুসিড ড্রিমিং এর সাথে আপনারা অনেকেই হয়তো পরিচিত আছেন। অনেকে পরিচিত থাকলেও হয়তো এটা কেন হচ্ছে বা কিভাবে হচ্ছে তা নিয়ে বেশ দ্বিধা দ্বন্দ্বে আছে এসবেরই উত্তর মিলবে আজকের এই লিখাতে।   লুসিড ড্রিম অর্থ কি? সহজ বাংলায় অনুবাদ করতে গেলে বলা যায় লুসিড অর্থ পরিষ্কার. অর্থাৎ স্পষ্ট আর dream মানে তো আমরা সবাই জানি যে স্বপ্ন। লুসিড ডিম হলো সেই স্বপ্ন যে আমাদের স্পষ্ট ভাবে মনে থাকে এবং স্বপ্ন চলাকালীন সময়েও আমরা এ উপলব্ধি করতে পারি যে এটি বাস্তব নয় বরং এটি স্বপ্ন কিন্তু শুধুমাত্র আক্ষরিক অর্থ দিয়ে লুসিড ড্রিম ব্যাখ্যা করলে ভুল হবে একটু অন্যভাবে বলা যাক ।  মনে করুন স্বপ্নে আপনি কি পাহাড়ের উপর থেকে দ্রুত গ...

ন্যানো টেকনোলজি কিভাবে কাজ করে ?

  যদি বলি আপনার চোখ দেখতে পারে না এমন গভীর ও প্রায় অনাবিষ্কৃত একটা পৃথিবী আছে. হয়তো বলতে পারেন যে মহাবিশ্বে কত গ্রহই তো আছে? সব খোঁজ কি আমরা পেয়েছি? কিন্তু যদি বলি আমাদের এই পৃথিবীর ভেতরে আরো একটি জগত আছে এবং যে জগৎ ছড়িয়ে আছে আমাদের গোটা বিশ্ব জুড়ে. এইবার হয়তো নড়েচড়ে বসবেন. হ্যাঁ আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে এমন এক রাজ্য যে আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না. এটাকে বলা হয় অণুবীক্ষণিক বিশ্ব. এই অণুবীক্ষণই বিশ্ব প্রচন্ড আকর্ষণীয় ও চমকে দেওয়ার মতো. কি কি ঘটছে এখানে তা আমার আপনার কল্পনারও বাইরে. এটা যেন কোনো ভিন গ্রহ বাসীদের রাজ্য. সম্ভাবনার দুয়ার খুলে রাখা আছে এই অণুবীক্ষণিক বা nano বিশ্বে.  ন্যানো কি ন্যানো হলো পরিমাপের একক। এক মিটারের একশো কোটি ভাগের এক ভাগ হচ্ছে এক ন্যানো। আর ন্যানো টেকনোলজি হলো বিজ্ঞানের এই অতি ক্ষুদ্র স্তরে একটা কিছু তৈরী করা আসলে শুধু তৈরি করা না. ন্যানোমিটার স্কেলে পরিবর্তন, পরিবর্তন, ধ্বংস বা সৃষ্টি সম্পর্কিত টেকনোলজিকেই ন্যানো টেকনোলজি বলে. অর্থাৎ ন্যানোমিটার স্কেলে পরিমিত যেকোনো বিষয়ে বহুমাত্রিক টেকনোলজিকে ন্যানো প্রযুক্তি বা ন্যানো টেকনোলজি বলা যে...

স্টকহোম সিন্ড্রম কি ? স্টকহোম সিন্ড্রম কেন হয় ?

ধরুন আপনাকে কেউ অপহরণ করল. আটকে রাখল অজানা কোন জায়গায়. কিংবা জিম্মি করল কোন বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য. হয়তো আপনাকে মেরে ফেলাটাই অপহরণকারীদের লক্ষ্য. পুলিশ আপনার খোঁজ পাচ্ছে না. এদিকে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় অস্থির হয়ে আছে আপনার স্বজনরা. এক পা দুই সপ্তাহ পার হয়ে হয়তো আপনাকে উদ্ধার করা হল. এই কয়েকটা দিন আপনি সূর্যের আলো দেখেননি. বন্দি অবস্থায় এক একটা ঘন্টাকেই আপনার কাছে মনে হয়েছে এক একটা মাসের মতো লম্বা. মুক্তির পর অপহরণকারীদের প্রতি কেমন অনুভূতি কাজ করবে আপনার? হাতের কাছে পেলেই তাদেরকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করবে তাই না? কিন্তু সেটা না করে বাড়ি ফেরার পর আপনি যদি সেই অপহরণকারীদের প্রশংসা শুরু করেন? তাহলে লোকজন আপনার দিকে কুঁচকে তাকাবে বৈকি? আপনি যদি অপরাধের তদন্তে পুলিশকে ঠিকমতো সাহায্য না করেন, আপনাকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই কিন্তু স্বাভাবিক. তার চেয়েও অবাক করার মতো ব্যাপার. কখন ঘটবে জানেন? যখন আদালতে গিয়ে আপনি বলবেন. আপনাকে যারা অপহরণ করেছিল তাদের প্রতি আসলে আপনার কোন অভিযোগ নেই. আপনি তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করতে চান. কি ভাবছেন? এমন পাগলামি আপনি কেন করবেন? পাগলামি বলুন আর যাই বলুন. ...

মিনিমালিজম কি ? কিভাবে মিনিমালিস্ট হওয়া যায় ?

মিনিমামলিজম এই ধারণাটি বিগত কয়েক বছরে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং এর যথেষ্ট কারণও আছে. এই পুরো ব্যাপারটা কি? সেটাকে সঙ্গায়িত করা যায় এভাবে যে,  মিনিমালিজম হচ্ছে যা আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সেগুলোকে ধারণ করা এবং বাকি সব কিছু যা আমাদের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে নেয় সেগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে ত্যাগ করা।   অর্থাৎ কোন কোন বিষয়ে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কোন জিনিসগুলোকে আমাদের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান সেই সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা থাকা এবং বাকি সব ত্যাগ  করে দেয়. সেগুলো নিয়েই জীবন ধারণ করা. কিন্তু এমন সংজ্ঞায়ন সত্ত্বেও minimalism কোন ধরাবাধা জীবন ব্যবস্থা নয় বা মিনিমালিস্ট হতে হলে কোন নির্দিষ্ট মানদণ্ড মেনে চলতে হবে এরকমটিও কিন্তু নয়. মিনিমালিস্ট লাইফ স্টাইল এমন একটি বিষয় যা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য স্বতন্ত্র। এক্ষেত্রে মূল বিষয়টি হচ্ছে সত্যিকার অর্থে কোন কোন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সেই সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা নিয়ে সেই অনুযায়ী জীবন ধারণ করা. প্রিয় দর্শক চলুন দেখি মিনিমালিজম কিভাবে আপনার জীবনধারা বদলে দিতে পারে।  মিনিমালিস্ট জীবন অবশ...

সিকাডা থ্রী থ্রী জিরো ওয়ান কি ?

সিকাডা থ্রী থ্রী জিরো ওয়ান দু হাজার বারো সালের চৌঠা জানুয়ারি। ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ ডট ফোর চ্যান ডট কম নামের ওয়েবসাইটের বুলেটিন বোর্ডে ছবি সহ একটি ম্যাসেজ পোস্ট করা হয়. ওয়েবসাইটের নীতিমালা অনুযায়ী ছবি প্রকাশকারীর নাম পরিচয় গোপন রাখা হয়. অজ্ঞাত পোস্ট করি সেই ছবিতে ব্যবহারকারীদের চিত্রের মাঝেই লুকানো একটি বার্তা উন্মোচন করার জন্য চ্যালেঞ্জ জানান. সেই মেসেজটিতে লেখা ছিল হ্যালো আমরা অত্যন্ত বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের খুঁজছি তাদের খোঁজার জন্য আমরা একটা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি । এই ছবিতে একটা মেসেজ লুকানো আছে এটাকে খুঁজে বের করো । এটাই তোমাদের আমাদের কাছে নিয়ে আসবে. আমরা সেসব স্বল্প সংখ্যক ব্যক্তিকে দেখার অপেক্ষায় আছি যারা এটি সম্পূর্ণ করতে পারবে. Good luck । আর নিচে ছিল একটি কোড থ্রি থ্রি জিরো ওয়ান. পুরো ইন্টারনেট দুনিয়া তোলপাড় হয়ে গেল যেন হঠাৎ করে. পৃথিবীর সেরা হ্যাকার এবং কোড সমাধানকারীরা নিজেদের বুদ্ধিমত্তা প্রমানের জন্য এই পরীক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়লো আর এই রহস্যময় ধাঁধার নাম দেওয়া হলো সিকাডা থ্রী থ্রী জিরো ওয়ান।  সিকাডা অর্থ মত বা ঘুগরি পোকা. ছবি পোস্ট করার কিছুক্ষণের মাঝেই গ...

সারোগেসি কি ?

সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান ধারণ করা নিয়ে এখনো বহু বিতর্ক আছে. শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা বিশ্বেই এই পদ্ধতি নিয়ে তর্ক বিতর্কের শেষ নেই.  এটার আইনি প্রক্রিয়াও জটিল। কারণ এটি একেক রাষ্ট্রে. শারোগেসি আইন একেক রকম. নারী মা হবেন প্রাকৃতিক নিয়ম সমাজ এমনটাই দেখতে অভ্যস্ত. কিন্তু কোন কারণে মা হবার ক্ষমতা না থাকলে তাকে পরিবার ও আশপাশ থেকে যে পরিমাণ কটু কথা শুনতে হয় তা সাধারণ মানুষের ধারণারও বাইরে.   সরোগেসি বিষয়টি কি? চিকিৎসা শাস্ত্রের অগ্রগতি এমন মায়েদের সামনে এনেছে যারা গর্ভ ভাড়া দিয়ে নিজে বাঁচেন অন্যদের মাতৃ সুখ দেন । একজন নারীর গর্ভে অন্য দম্পতির সন্তান ধারণের পদ্ধতিকে সারোগেসি বলা হয়.সারোগেসির এই  পদ্ধতি বেশ দীর্ঘকালীন. আইভিএফ পদ্ধতিতে স্ত্রী ও পুরুষের ডিম্বাণু শুক্রাণু দেহের বাইরে নিষিক্ত করে তা নারীর গর্ভাশয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়. কিন্তু এখানেও জটিলতা. কেন? সে বিষয়ে পরে আসছি. বাংলাদেশ সহ বহু দেশই এই সারোগেসি একরকম ভাবে নিষিদ্ধ. সুতরাং বিষয় টি  সংবেদনশীল. এমনকি বেশিরভাগ ধর্মেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা. চলুন কথা বলি সারোগেসি মাদার সম্পর্কে। আইভিএফ বা টেস্ট টি...

কিভাবে লিমিটলেস হওয়া যায় ? লিমিটলেস আসলে কিভাবে কাজ করে ?

এনজিটিপিল,  এটা এমন এক পিল যা আপনাকে করবে আল্ট্রা ফোকাসড. দেবে দুর্দান্ত মোটিভেশন. বের করে আনবে আপনার সর্বোচ্চ সম্ভাবনা. আপনি হয়ে উঠবেন আনস্টপল. বাস্তবতা পাবে প্রতিটি স্বপ্ন. কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এমন কোন পিলের অস্তিত্ব নেই. ফলাফল আপনি আটকে আছেন একটি খাদে. সারাক্ষণ ক্লান্তি নিয়ে হয়ে উঠছেন আনপ্রোডাক্টিভ. নষ্ট হচ্ছে ক্রিয়েটিভিটি. সময় গড়িয়ে যায়. ঋতুর পরিবর্তন ঘটে. কিন্তু আপনি ডুবে থাকেন এক হতাশায় যাতে আপনি দিন দিন পিছিয়ে পরছেন. আপনি যা যা এতদিন অর্জন করবেন ভেবেছিলেন তা কিছুই আপনি অর্জন করতে পারেননি । নিজেকে সান্তনা দিচ্ছেন আগামীকাল হবে ভিন্ন। কিন্তু তা কখনোই হয়ে ওঠে না এখন যদি আপনাকে বলি কোনো জাদুকরী পিলের সাহায্যে নয় বাস্তবিক লিমিটলেস হয়ে ওঠা সম্ভব।  একদম প্রমাণিত পদ্ধতিতে যা একেবারে ফ্রিতে ব্যবহার করা সম্ভব.  তো আছেন তো শেষ পর্যন্ত ?  Limit less হওয়ার যাত্রায় ।  স্টেপ ওয়ান : এনার্জি--  মাত্র কয়েক মাস আগে আমি নিজেও আপনার মতো কর্মশক্তিহীন অনুভব করতাম. সামান্য কাজেই আসতো অবসন্নতা, গেয়ে ধরতো ক্লান্তি একদিন হঠাৎ টের পেলাম আমি নিজেই নিজের energy নি...

পেগাসাস স্পাইওয়ার কি ?

গত কিছুদিন ধরেই বিশ্ব রাজনীতি এবং প্রযুক্তি জগৎ এই দুই জায়গাতেই আলোচনার বিষয়বস্তু একটাই। সেটা হচ্ছে পেগাসাস স্পাইওয়ার. বিশ্বজুড়ে নানান দেশের মানবাধিকার কর্মী সাংবাদিক আইনজীবী ও রাজনীতিকদের ফোনের নজরদারি চালানোর ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর ইজরায়েলের বেসরকারি কোম্পানি nso গ্রুপের তৈরি করা এই সফটওয়্যার নিয়ে এখন তুমুল তরজা চলছে দুনিয়া জুড়ে । চলুন কথা বলি দুনিয়া ওলট পালট করে দেওয়া স্পাইওয়ার সম্পর্কে । পেগাসাস মূলত একটি নজরদারি বিষয়ক সফটওয়্যার । ইজরাইলের সংস্থা এনএসও ই সফটওয়্যার তৈরি করেছে। যা দিয়ে যে কারো মোবাইলে আড়ি পাতা যায়. এটা কিন্তু সাধারণ কোন নজরদারি নয়. আগে ফোনে আড়ি পেতে শুধু দুই প্রান্তের কথাবার্তা শোনা যেত. আর সফটওয়্যারের মাধ্যমে গোটা ফোনটারই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় হ্যাকাররা. ফোনের কথাবার্তা WhatsApp এর চ্যাট, ছবি, ফোনে কি কি তথ্য আছে সবই জানা যায়. আরো ভয়ানক ব্যবহার হচ্ছে মোবাইল যিনি ব্যবহার করছেন তিনি জানতেই পারেন না যে তার ফোন হ্যাক করা হয়েছে. সমস্ত তথ্য পাচার হয়ে যাচ্ছে নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর কাছে. কিন্তু কারো ফোনে পেগাসাস software install করতে হলে তো সেই ফোনটাকে...

রেট রেস কি ?

      আপনি ঠিক কখন ইঁদুর দৌড়ে যোগ দিয়েছেন এটা হিসাব করা কঠিন. কিন্তু নিশ্চিত থাকুন আপনি এই দৌড়ে আছেন. ক্লাস eight এ পড়ার সময়ের কথা মনে আছে? সামনে বৃত্তি পরীক্ষা পাটিগণিত বীজগণিতের অংক প্যাঁচ লাগাচ্ছে বিজ্ঞানের জটিল সব সূত্র ভোরে ওঠে প্রাইভেট টিউটরের বাসায় ছোটা রাত জেগে পড়াশোনা. বয়সের তুলনায় অনেক বেশি কর্ম ব্যস্ত একটা সময় নিশ্চয়ই কাটিয়েছেন তখন? আমরা সবাই কাটিয়েছি. সেই সময় নিশ্চয়ই অভিভাবক বলেছে এই তো আর কটা দিন. বৃত্তি পরীক্ষা শেষ হলেই জীবন শান্তি আর শান্তি. জীবনের নানা এপিসোডে আপনি এই কথাগুলো শুনেছেন অনেকবার অনেকের মুখে. এসএসসি পরীক্ষাটা দাও, কলেজে উঠলেই তো স্বাধীনতা. একবার ভার্সেটিতে উঠতে পারলেই জীবন হবে আনন্দে ভরপুর. একবার জব লাইফে ঢোকো. নিজের টাকায় আয়েশ করার মজাই অন্যরকম. শুনেছেন না এসব?  বয়স ঘড়ির ত্রিশের প্রান্তে দাঁড়িয়ে হিসেবগুলো মেলাতে পারেন কি? কি মনে হয়? এই এপিসোডগুলোর কোনোটা পার হবার সময় জীবন খানিকটা হলেও সহজ হয়েছে? সুন্দর হয়েছে? হয়নি, হবেও না, মিথ্যা একটা মরীচিকার আশায় আমরা ছুটেছি ঠিকই আমাদের ছোটানো হয়েছে, কিন্তু হিসাব মেলেনি ছুটত...

ডাচ ডিজিজ কি ? অর্থনীতি কিভাবে রোগে ভুগতে পারে ?

সো হোয়াট দ্য হেল দিস ডাচ ডিজিজ? ডাচ ডিজিজ শব্দটা শুনলে আপনার স্বাভাবিক ভাবেই মনে হবে এটা কোন রোগের নাম । হ্যাঁ এটা একটা রোগ. তবে মানুষের নয়. কোন প্রাণীরও নয়. তাহলে? এটা মূলত অর্থনীতির একটা সিন্ড্রোম. কিন্তু অর্থনীতির টার্মের সঙ্গে ডিজিজ কথাটা যুক্ত হল কেন? ডাচ বা নেদারল্যান্ড দেশটারই বা কি ভূমিকা এতে?  না এটা বুঝতে আপনাকে অর্থনীতির ছাত্র হতে হবে না ।কিন্তু বিষয়টা বেশ মজার দু হাজার সতেরো সালে বুকিং ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রকাশিত ডাচ ডিজিজ এন্ড ইকোনমিক ইলনেস ইজি টু ক্যাচ ডিফিকাল্ট টু কিওর শিরোনামের আর্টিকেলের শুরুতেই বলা হয়ে ছিল- what a persistantly low oil price, dose to oil richan prises like what a long cold winter dust to people একথার তাৎপর্য কি?  সহজ বাংলায় বুঝিয়ে বলা যায় যদি বিশ্ববাজারে ক্রমাগতভাবে তেলের দাম কমতে থাকে তখন তেল সমৃদ্ধ তেলের ওপর ভাবে নির্ভরশীল দেশগুলোর অর্থনীতি নানান সমস্যায় ভুগতে পারে. এখানে তেল একটা রূপক মাত্র. তেলের জায়গায় চাল, ডাল, লবণ, চিনি যেকোনো কিছুই হতে পারে. হতে পারে কোন শিল্প যেমন টেক্সটাইল গার্মেন্টস বা ইনফরমেশন টেকনোলজিও. মূল বিষয়টা হচ্ছে...