আজকাল খুব কমন একটা শব্দ ডিপ্রেশন. যার বাংলা অবসাদ । ডিপ্রেশনের সাথে সাথে পরিচিত হয়ে উঠছি আমরা মুড সুইং শব্দটার সাথেও । এই জেনারেশনের কারো সোশ্যাল মিডিয়ায় ডিপ্রেশনে না ভোগাটাই যেন বিরাট অপমানজনক। সবাই কেন যেন অস্থির হয়ে আছে বোঝাতে যে সে ডিপ্রেশনে ভুগছে । কখনো গানের লিরিক্স আবার কখনো বিখ্যাত লেখকের কোটেশন সবকিছুতেই ডিপ্রেশন ।
সাইকিয়াট্রিতে এই ডিপ্রেশন হল এক ধরনের মুড ডিসঅর্ডার । যেটা একমুখী অবসর বা ইউনিফুলার ডিপ্রেশন । কিন্তু সম্প্রতি আর এক ধরণের অবসাদ বিজ্ঞানীদের মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। যেটাকে বলা হচ্ছে বাই পোলার ডিপ্রেশন । বাই পোলার অর্থাৎ দ্বিমুখী । একে ম্যানিক ডিপ্রেশনে বলা হয়। এখনো পর্যন্ত মনোবিজ্ঞানীরা বাই পোলার ডিসঅর্ডারের কারণ সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পারেন নি। এর ওপর প্রচুর গবেষণা চলছে। জানলে অবাক হবেন যে শুধুমাত্র আমেরিকাতেই সাত মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভুগছে । কিন্তু আসলে কি ঘটে? বাইপোলার ডিসঅর্ডারে? চলুন কথা বলি বাই পোলার ডিসঅর্ডার নিয়ে আজ কথা বলা যাক।
বাইপোলার ডিসঅর্ডার কাকে বলে? খুব সংক্ষেপে বলা যায় বাইপোলার ডিসঅর্ডার একটি মানসিক অবস্থা। যেখানে কোনো ব্যক্তির দুটো পর্যায়ে থাকে যেগুলো পালা করে ঘুরে ঘুরে আসে। একটি হলো ডিপ্রেশন আর অন্যটি হল ম্যানিক্স স্টিচ। এখন বিশদ বর্ণনায় যাবার আগে চলুন দেখি ইউনিপোলার বা একমুখে ডিপ্রেশনে কি কি ঘটে।একটা স্বাভাবিক মানুষের আচরণ কেমন হবে? স্বাভাবিক মানুষেরও মুডসুই হতে পারে। যেমন চাকরি চলে গেলে বা সম্পর্কে গন্ডগোল লাগলে ক্ষনিকের জন্য ডিপ্রেশনে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটা কিছুদিন পরে বেশিরভাগ মানুষই কাটিয়ে ওঠে।
প্রশ্ন হল ছোটখাটো মন খারাপকে কি depression বলা যায়? উত্তর? না। কোন কারণ ছাড়াই depretion এ ভোগা মানুষেরা অনুভূতির সকল দরজা জানালা বন্ধ করে রাখেন। তাই যারা আসলেই ডিপ্রেশনে ভুগছেন তারা সোশ্যাল মিডিয়া তো দূরের কথা। নিজের খুব কাছের মানুষের কাছেও ডিপ্রেশনের কথা লুকিয়ে রাখেন। তাদের বেশিরভাগেরই থাকে না ভালো বা খারাপ লাগার অনুভূতি। নিজের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় এদের মাঝে। ফলে অনেক সময় বেছে নেয় খুবই ব্যস্ত জীবন। অতিরিক্ত ধূমপান নিজেকে অথবা অন্যকে আঘাত করা ইত্যাদি আচরণ দেখা যায়। ক্ষুধা চলে যায়, ঘুম হয় অতিরিক্ত বেশি, না হয় একেবারেই ঘুম. সৃজনশীল কাছ থেকে দূরে দূরে থাকে এরা। চিন্তা ভাবনায় পরিবর্তন আনতে চায় না সহজে এবং সবচেয়ে বড় যেটা ঘটে তা হল সবটুকু জুড়ে শুধু নিজের জগৎ নিয়েই থাকে।
ইউনিফলার ডিপ্রেশনের সময়টা যথেষ্ট দীর্ঘ হয় সাধারণত। ক্ষণিকের জন্য এরা অনেকদিন পর পর কিছুক্ষণের জন্য আনন্দিত হলেও তা টিকে থাকে না। সাধারণত আবার ডিপ্রেশনে চলে আসে ওই সময়টা কেটে গেলেই। তবে ইউনিফুলার ডিপ্রেশন সিক্রিয়াট্রিকের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব হতে পারে। দেখা যাচ্ছে ডিপ্রেশন শব্দের অর্থ অতটা ছোটও নয় যতটা এই শব্দের বুঝে বা না বুঝেই ব্যবহার হয়।
এখন চলুন দেখি বাই পোলার বা ম্যানিক ডিসঅর্ডারে কি কি ঘটে ? আগেই বলেছি বাই পোলার ডিসোডারে দুটো মেরু বিন্দু থাকে যা চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে আসে। এই দুটো পর্যায়ের একটা হল স্বাভাবিক ডিপ্রেশন পর্যায়. এই সময় একটু আগেই বলা সবগুলো লক্ষণের সাথে সাথে আত্মহত্যার প্রবণতাও চলে আসতে পারে। আর একটা একদম উল্টো অবসাদের প্রচণ্ড ফুর্তি চলে আসে মনে ।খাওয়া দাওয়া খুব বেড়ে যায়। চলে আসে বিভিন্ন রাজ্যের প্লট এই করবো সেই করবো ।যেই মানুষটা এতদিন পরে পরে ঘুমাতো বা ঘুম না আসার জন্যে কষ্ট পেতো তার এই অবস্থায় ঘুমের প্রায় কোনো প্রয়োজনই হয় না। একেবারে তোলপাড় করে দেয় চারিদিক। কিন্তু এই দুই চক্র যে দিনে দিনে রাতারাতি ঘটে তা কিন্তু নয় । Extreme low থেকে mood extreme high হতে কয়েকদিন বা সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যায় ।আরও একটা ব্যাপার ঘটে manick stage এ। নিজের সামর্থের বাইরে গিয়ে দান টান করা, নিজেকে আধ্যাত্মিক level এর কিছু মনে করা হতে থাকে এই সময়। যেমন ঈশ্বরের কাজে দুনিয়ায় আসা বা অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ইত্যাদি। অনেক টাফ ডিসিশনও অতি সহজে এবং ভুল ভাবে নিয়ে ফেলা অস্বাভাবিক কিছু নয় ।আর কিছুদিন পর যখন এই স্টেজ কেটে গিয়ে আবার ডিপ্রেশন ফিরে আসে তখন সবকিছুর জন্য শুরু হয় চূড়ান্ত অনুশোচনা। Extreme mode এ অনর্গল কথা বলার প্রবণতাও দেখা যায়। বাইপোলার ডিসঅর্ডার কত ভাবে আসতে পারে ?
মনোবিজ্ঞানীদের মতে বাইপোলার ডিসঅর্ডার তিন প্রকার__ লেভেল ওয়ান, টু এবং সাইকোথেমিয়া. লেভেল ওয়ানে এক্সট্রিম লো পর্যায়ে আসে যা অন্তত দুই সপ্তাহ জুড়ে থাকে। এরপরে আসে এক্সট্রিম হাই যে অন্তত এক সপ্তাহ থাকে। এমনকি এই সময় হস্পিটালাইজড করতেও হতে পারে। আবার অনেকের এই ম্যানেজ স্টেজ তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত চলতে পারে। এক্ষেত্রে সে মানুষ বুঝতেই পারে না যে তার মাঝে হুটহাট পরিবর্তন করছে। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডায়াগনসিসের প্রয়োজনই হয় না। লেভেল টু তে লেভেল ওয়ানের মতোই এক্সট্রিমলো ন্যূনতম দুই সপ্তাহ টিকে থাকে। এরপর এক্সট্রিম হাই না হয়ে একটু কম ম্যানিকেপিসোডে থাকে সাধারণত।
লেভেল টু তেও হাই এপিসোড দুই থেকে চার মাস পর্যন্ত চলতে পারে। সাইকোথেমেয়ার রিসোর্ডারে এক্সট্রিমলো বা এক্সট্রিম হাই এপিসোড থাকে না। থাকে একটু কম লোক বা হাই এপিসোড। এই সাইকেলের এক একটা অন্তত দুই বছরের হয়। বাইখোলার ডিসঅর্ডারের একদম সঠিক কারণ এখনো বিজ্ঞানীরা জানেন না। প্রচুর গবেষণা চলছে। কিন্তু শুধু ঝুঁকির কারণগুলোই এখনো পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়েছে। এখনো পর্যন্ত মস্তিষ্কের গঠনগত কারণকে এই অবস্থার সৃষ্টির জন্য দায়ী করা হয়। যদি রোগীর বাবা মার বাইপোলার ডিসঅর্ডার থাকে তাদের সন্তানদেরও এই রোগ হবার উচ্চ সম্ভাবনা থেকে যায়। এছাড়াও খুব বেশি মানসিক চাপ, মানসিক আঘাত নেশায় আক্রান্ত অথবা শারীরিক কোনো অসুস্থতাও বাইপোলার ডিসঅর্ডারের কারণ হতে পারে। এই রোগ, যদিও রোগ বলা এখনই ঠিক কিনা তা আমরা জানি না। নির্ণয় করা একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ চিকিৎসকদের জন্য। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাইপোলার পেশেন্টকে নিজেকেই বুঝতে হয় যে তার বাইপোলার হয়েছে। আর সেই বুঝে সতর্ক থাকতে হয়।
যদি এটাকে আমরা রোগ বলি তাহলে বলা যায় এখনো পর্যন্ত সুনিশ্চিত কোনো চিকিৎসা নেই। বাই পোলারে আক্রান্ত ব্যক্তির সঠিকভাবে পরিচর্যাই হতে পারে একমাত্র উপায়। অনেক সময় ডাক্তাররা অ্যান্টি ডিপ্রেশন, মেডিসিন সাজেস্ট করেন, সাথে মোড স্টেবিলাইজার। তবে সেটা condition এর ওপর depend করবে। কারণ এর বিশাল side effect আছে. ফলাফল হতে পারে হিতে বিপরীত। এই জন্য depression এ চিকিৎসকের পরামর্শ বাদে কখনোই মেডিসিন নিয়ে উচিত নয়। কারণ এটি ম্যানিক স্টেজ ফিগার করে ওভার ম্যানিক ঘটাতে পারে। সুতরাং হেলাফেলা করার কোন উপায় নেই।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন