একটা কুকুর ! তারা দেখছে আকাশের নক্ষত্র. যেমন দেখছি আমরা. হয়তো শ্বাস নিচ্ছে অথবা নিচ্ছে না. সৃষ্টি করছে অথবা করছে না. কিন্তু এক টা প্রশ্ন ঠিকই আছে তাদের মাঝে. ঠিক আমাদেরই মতো. আমরা কি মহাবিশ্বে একা? যখন আমস্ট্রংরা চাঁদ থেকে ফিরে এসেছিল তখন তাদের কোয়ারান্টিনে রাখা হয়েছিল বেশ কিছুদিন । কেন ? কারণ যদি কোন ভাইরাস বা অন্য কোন জীবাণু চলে আসে তাদের মাধ্যমে চাঁদ থেকে অর্থাৎ খুব কাছের আমাদের এই উপগ্রহেও প্রাণের সম্ভাবনার কথা ভেবেছিলেন বিজ্ঞানীরা অদ্ভুত তাই না। চলুন যাই প্রাণের খোঁজে মহাবিশ্বে। পৃথিবী কি প্রাণের একমাত্র উৎস? বহু প্রাচীন এই প্রশ্ন. আমাদের এই গ্রহে যত বালুকোনা আছে তার চেয়েও দশ হাজার গুণ বেশি নক্ষত্র আছে শুধুমাত্র আমাদের মিল্কিওয়েতে. আরো স্পষ্ট করে বলা যায় এই সংখ্যা টেন টু দি পাওয়ার টোয়েন্টি টু থেকে টেন টু দি পাওয়ার twenty four বা আরো বেশি. যদি এর পাঁচ শতাংশ নক্ষত্র আমাদের সূর্যের মতো হয় তাহলে সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচশো billion billion নক্ষত্র. খুবই ভালো কথা. প্রতি পাঁচটি সূর্য সাদৃশ্য নক্ষত্রের একটিতেও যদি ধরি যে পানি ও প্রাণ সৃষ্টির রাসায়নিক উপাদান আছে. তাহলে সংখ্যা দাঁড়ায় একশো billion billion গ্রহ. দারুণ ।
এক কাজ করি. এই একশো billion billion থেকে নিরানব্বই শতাংশ ছাঁটাই করে দিই. ধরে নিই মাত্র এক শতাংশে প্রাণ থাকার সম্ভাবনা আছে. তাহলে কত দাঁড়ালো? একশো এক কোটি গ্রহ. তাহলে তারা সবাই কোথায়? নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত ইতালিয়ান, আমেরিকান বিজ্ঞানী, এম রিকো ফার্মিও একদিন জিজ্ঞেস করেছিলেন, এই যে এত এত পৃথিবীর সাদৃশ্য গ্রহ যাতে প্রাণের সম্ভাবনা আছে. তারা কোথায়? আমরা যদি তাদের চেয়ে কম বুদ্ধিমানী হই এত এত গ্রহের কোন সভ্যতাই কি নেই? আমাদের সেই উন্নত বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন. তারা কেন যোগাযোগ করছে না তাহলে? এর উত্তর লুকিয়ে আছে মহাবিশ্ব ও সময়ের কোন স্থানে যা আজও অচেনা. এসসিটিএল বহু বছর যাবৎ চেষ্টা করছে মহাবিশ্ব থেকে কোনো একটা সংকেত পাওয়ার আশায় । গবেষণা চলছে কয়েক দশক ধরে কিন্তু প্রাপ্ত সিগন্যাল জিরো । এই বিষয়টা যাক । প্রাণের সন্ধানে আমাদের অবশ্যই প্রথমে মৌলিক বিষয়ের দিকে তাকাতে হবে. আমাদের চোখে যাই দেখি না কেন তা অত্যন্ত জটিল. দেখে অভ্যস্ত বলেই প্রশ্ন আসে না মনে যে কিভাবে সম্ভব? প্রাণের সৃষ্টিতে প্রয়োজন রসায়ন। আমরা এক একজন রাসায়নিক বিক্রিয়ার এক এক বিশাল ভান্ডার. এখন এই বিক্রিয়ার জন্য কি কি প্রয়োজন? প্রথমেই দরকার শক্তির. যেমন আলো, তাপ ইত্যাদি. একদম সঠিক পরিমানে. এই কারণে ভেনাস বা জুপিটারে প্রাণ নেই কারণ তারা হয় সূর্যের খুব কাছে নয়তো অনেক দূরে. এরপর দরকার বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান. রাসায়নিক উপাদান তো সব গ্রহই আছে. কিন্তু প্রয়োজন প্রাণীর অস্তিত্ব তৈরির উপাদান. যেমন অক্সিজেন বা কার্বন. আর প্রয়োজন সবচেয়ে দরকারি তরল, পানি কেন? কারণ বাষ্পীয় তরলে পরমাণুগুলো জোট বাঁধতে পারে না. আবার কঠিন বরফে তারা নড়তে পারে না. এই কারণে বহু গ্রহে বরফের অস্তিত্ব থাকলেও প্রাণের অস্তিত্ব নেই. তাই evolution এর অবশ্যই অবশ্যই প্রয়োজন পারেন. পৃথিবীর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই প্রথম কোষ সম্ভবত উত্তপ্ত আগ্নেয়গিরির জলে জন্মগ্রহণ করেছিল. যে জীব বিজ্ঞানের ভাষায় এটা একসময় ছিল অসম্ভব. যা আমাদের শেখায় প্রস্তুত হতে পারে মৌলিক এবং সাধারণ উপাদানগুলো থেকেই. আবার একদম unnatural উপাদানে তৈরি এলিয়ান থিওরি হুট করেই ফেলে দেওয়া সম্ভব নয়. কারণ এখনো বিজ্ঞান অনেক কিছুই জানে না. এখন মহাবিশ্বে তাকানো যাক. একদম পৃথিবীর সদস্য গ্রহ গুলোকে বলা হয় এক্সওপ্লানেড. এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা তিন হাজার আটশো এক্সওপ্লানেটের খোঁজ পেয়েছেন. আমাদের পৃথিবীর চেয়ে দেড় গুণ বড় ক্যাপলার সিক্স টু এফ. বারোশো আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত. সাত billion বছর বয়সী এই গ্রহে পানির অস্তিত্ব থাকার প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে. ট্র্যাপিস্ট ওয়ান ডি একচল্লিশ আলোকবর্ষ. টি গার্ডেন বি বারো আলোক বর্ষ. কে টু এইট্টিন বি একশো এগারো আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত. এগুলোর প্রত্যেকটাতেই পানিটা থাকার সম্ভাবনা আছে. এমনকি কে two eighteen B তে নিশ্চিত বায়ুমণ্ডলীয় জলীয় বাষ্পতার প্রমাণ পাওয়া গেছে. আমরা মহাবিশ্বের মহাবিস্ময়ের উপরিভাগে একটা আঁচড় কাড়তে পেরেছি মাত্র. আচ্ছা ড্রেকের সমীকরণ জানেন তো? না না. ভয় পাবার কিছু নেই. বুঝে যাবেন আপনিও. যারা কসমোস টিভি সিরিজ দেখেছেন তাঁরা জানেন কল, সেকেন্ড এবং তাঁর বন্ধু এবং কর্নেল ইউনিভার্সিটির সহযোগী গবেষক এই সমীকরণটি বুঝিয়ে দিয়েছেন খুব সহজে. না দেখলে দেখে ফেলতে পারেন. এখানে সংক্ষেপে এন হচ্ছে মহাবিশ্বের যোগাযোগ সক্ষম সভ্যতার সংখ্যা. r নক্ষত্রের জন্মহার. SP হলো সেই সব নক্ষত্রের সংখ্যা যাদের ঘিরে গ্রহ আবর্তিত হচ্ছে. NE যে সব নক্ষত্রকে ঘিরে গ্রহ রয়েছে সেগুলোতে উপস্থিত সম্ভাব্য প্রাণ ধারণে সক্ষম গ্রহের গড় সংখ্যা. FN হল সকল গ্রহের সংখ্যা যেখানে প্রাণের সম্ভাবনা আছে. FI হলো যত গ্রহে মোট প্রাণের বিকাশ ঘটেছে। এফসি সনাক্তকরণ উপযোগী বেতার তরঙ্গ মহাকাশে প্রেরণ করতে সক্ষম প্রযুক্তি ধারণকারী সভ্যতা আছে এমন গ্রহের সংখ্যা । এল যে সময় ধরে বুদ্ধিমান প্রাণীরা যোগাযোগের জন্য নিজেদের অস্তিত্ব সম্প্রচার করছে মহাবিশ্বে। এই সূত্র নিয়ে বিতর্ক চলছে বহু বছর. ড্রেক এই সমীকরণের আনুমানিক মানও দিয়েছিলেন. সমীকরণের সমাধান এসেছিল তখন দশ. অর্থাৎ শুধু আমাদের গ্যালাক্সিতেই অন্তত দশটি যোগাযোগ সক্ষম, সভ্যতা থাকা সম্ভব. পরে নাসা এই সমীকরণের মান বের করেছিল দুই দশমিক তিন এক. নাসার ধারণা করছে তারা কিছু একটা আবিষ্কারের দারপ্রান্তেই দাঁড়িয়ে আছে. কি সেটা কে জানে? ব্রেকের এই সূত্র হলো সহজ ও সাবলীল উপস্থাপনা যাতে সহজেই ভ্যারিয়েবল এর মানগুলো বসিয়ে উন্নত সভ্যতার সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব. কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই সংখ্যা নিরূপণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভবপর হয়নি. কারণ আমরা একটি মানও জানি না. অদূর ভবিষ্যতে যে জানবো তাও সঠিক বলা সম্ভব নয়. তবে আশার বিষয় হলো একটি মান জানতে পারলে অপর মানগুলিও বের করার পথ হবে উন্মোচিত. যদি ড্রেক সমীকরণের আশা ব্যঞ্জক গণনা সত্যিই হয়. আর মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে বুদ্ধিমান সভ্যতা বেতার প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে পারে. তাহলে অন্তত তাদের সঙ্গে বেতার যোগাযোগ সম্ভব. এইসব সভ্যতা এক লাখ আলোকবর্ষ ব্যস বিশিষ্ট গ্যালাক্সির সর্বত্র এলোমেলো ভাবে বিন্যস্ত থাকলে কাছের সভ্যতার দূরত্ব হবে প্রায় দুইশো আলোকবর্ষ । তার মানে এমনকি আলোর গতিতে গেলেও সেখান থেকে কোনো বার্তা ফেরত আসতে দুই শতাব্দী লেগে যাবে । মহাবিশ্বের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম আপাতত রেডিও ওয়েব। একসময় হয় তো এর চেয়েও উন্নত মাধ্যম আবিষ্কৃত হবে। হয়তো তখন সম্ভব হবে যোগাযোগ করা অথবা হয়তো হবেই না বিজ্ঞানে সম্ভাবনা সবসময় উন্নত চিন্তায় নিয়ে যায় । কিন্তু আসলে কি তাই ? যদি এলিয়েন লাইফের খোঁজ পাই আমরাও তাঁরা আমাদের চেয়ে কম বুদ্ধিমান হয় তাহলে হয়তো চিন্তার কিছু নেই. কিন্তু যদি উন্নত বুদ্ধির হয়. তাহলে কিন্তু একটা সমস্যা আছে. যেভাবে নিয়ন্ডারতাল হারিয়ে গেছে তাদের চেয়ে উন্নত মানুষ জাতির জন্যে আমাদের ক্ষেত্রেও কি সেই সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায়? আমরা খুব বেশি ব্যস্ত. আসলে আমরা একা নাকি এটা দেখার জন্য. এটা কি ভালো না খারাপ তা সময়ই বলে দেবে. হয়তো সেখানেই বিজ্ঞানের শুরু. অথবা কে জানে? সেখানেই হয়তো শেষ.
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন