দূর থেকে দেখলে বড়সড় ইঁদুরের গর্ত বলে মনে হবে। কাছে গেলেই বোঝা যাবে এইখান দিয়ে কোনোভাবে মাঝেরই আকারের একজন মানুষকে ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া সম্ভব ।মাটির বেশ খানিকটা নিচে নেমে গেছে এই গর্ত, ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার, ঠিক যতটা অন্ধকার এখানকার বাসিন্দাদের জীবন । যে অন্ধকার বর্ণবাদে ঠাসা এক পৃথিবীকে উজ্জ্বল করার কাজে নিয়োজিত. যে অন্ধকার আমাদের মুখে হাজারো ওয়াটের ঝলমলে আলো ছড়ায়. যে অন্ধকার আমাদের শারীরিক সৌন্দর্য বাড়ায় আর মনের কুৎসিত রূপটা তুলে আনে প্রকাশে ।
মাইকা স্বচ্ছ এক ধরনের ধাতব পদার্থ. বাংলায় একে ডাকা হয় অভ্র নামে । নানা রকমের কাজে এর ব্যবহার. টুথপেস্ট তৈরিতে এই জিনিসের প্রয়োজন হয় উজ্জ্বল রং বানাতেও লাগে মাইকা. তবে সবচেয়ে বেশি কোথায় ব্যবহার হয় জানেন? মেকআপ তৈরী. হ্যা. যে মেকআপ বা প্রসাধনী সামগ্রী ছাড়া আমাদের দিন চলে না. সেই কসমেটিকস ইন্ডাস্ট্রিতে সবচেয়ে বড় কাঁচামালের নাম হচ্ছে মাইকা। আর এই মাইকা সংগ্রহের আড়ালেই লুকিয়ে আছে কসমেটিকস ইন্ডাস্ট্রি সবচেয়ে বীভৎস সত্যিটা । যে সত্যিটা বিলিয়ন ডলারের এই ইন্ডাস্ট্রি চেপে রাখতে চায় সবসময় ।চায় অস্বীকার করতে। আপনি বা আপনার পরিবারের কোনো সদস্য যখন নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনার জন্য চামড়ার উপর দামি মেকআপের আস্তরণ ব্যবহার করছেন চোখে লাগাচ্ছেন আই শ্যাডো, প্যালেট, ঠোঁট রাঙাচ্ছে লিপস্টিক কিংবা হাইলাইটার ব্যবহার করে ত্বক কে করে তুলছেন মোলায়েম এবং উজ্জ্বল । আপনার কল্পনার ত্রি সীমানাতেও হয়তো নেই এইসব প্রোডাক্টের আড়ালে আপনি আসলে নিজের শরীরে রক্ত মাখছেন। ছোট ছোট অবুঝ কিছু শিশুর রক্ত । জীবনের সবচেয়ে কমল সময়টায় যারা আপনার প্রসাধনীর কাঁচামালের যোগান দিতে গিয়ে লাশ হয়ে যাচ্ছে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে । যেসব মৃত্যুর হিসাব কোন সরকারি পরিসংখ্যানে রাখা হয়নি. পরিবার পরিজন ছাড়া এই হতভাগ্যদের কথা কেউ মনে রাখেনি. দশ বারো বছর আগেও চড়া মেকআপের একটা চলছিল. ইউটিউবেও এখন মেকআপ টিউটোরিয়ালের ছড়াছড়ি।
মেকআপের জায়গা এখন দখল করেছে হাইলাইটার. চামড়ার রং ফর্সা করার পরিবর্তে এটির ব্যবহারে ক্ষনিকের জন্য চামড়া হয়ে উঠছে দারুন উজ্জ্বল. আর হাইলাইটার তৈরির জন্য মাইকের ব্যবহার তাই অপরিহার্য. এই একই ঘটনা ঘটেছে লিপস্টিক বা আই শ্যাডোর বেলাতেও । নিজস্ব কোনো রঙ নেই। যেকোনো রঙের সঙ্গে এটাকে ব্যবহার করা যায়। এতে করে নির্দিষ্ট সেই রঙের মেকআপটি ব্যবহারের পর অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়ে ধরা দেয়। এ কারণেই মাইকা ছাড়া এসব মেকআপ তৈরীর কথা ভাবাও যায় না। কিন্তু মেকআপে মাইকের ব্যবহারের সঙ্গে রক্তারক্তির কি সম্পর্ক. কুৎসিত যে সত্যের কথা শুরুতে আমরা বলেছিলাম সেটাই বা কি? সেটা জানার জন্য আমাদেরকে যেতে হবে ভারতে. একশো তিরিশ কোটি মানুষের এই দেশটার বুকেই সবচেয়ে বেশি মাইকা পাওয়া যায় । বিশেষ করে বিহার এবং ঝাড়খন্ড এই দুই প্রদেশের মাটির নিচে মাইকের বড়সড় যোগান রয়েছে. এছাড়াও দক্ষিণ ভারতের কিছু জায়গা এবং রাজস্থানেও পাওয়া যায় মাইকা।
ঝাড়খন্ড, ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র প্রদেশ. এখানকার মানুষের মাথাপিছু আয় প্রতিদিন মাত্র পঞ্চাশ রুপির আশেপাশে. এই টাকা দিয়ে ভরপেট খাওয়াটাই দুঃসাধ্য ব্যাপার. এ প্রদেশের অনেক জায়গাতেই মাটির নিচে পাওয়া যায় এই উজ্জ্বল ধাতু মাইকা. সরকারিভাবে মাইকা আহরণের কোন ব্যবস্থাই নেই. তাই মাটি খুঁড়ে খনি তৈরি করা বা সেখান থেকে মাইকা সংগ্রহের কাজটা পুরোপুরি ভাবে বেসরকারিভাবেই করা হয়. সরকারিভাবে এই কাজটা না করার একটা বড় কারণ হচ্ছে এই মাইকা খনিগুলো স্থানীয় প্রভাবশালীরা নিজেদের দখলে রাখে. সরকারের নানা দপ্তরে তারা টাকা পয়সা দিয়ে ম্যানেজ করে রাখে. এ কারণে কেন্দ্রীয় বা প্রাদেশিক. কোন সরকারই সেখানে তেমন ভাবে একটা নাক গলায় না. মাইকা খনি এলাকাগুলোতে গেলে আপনার মনে হবে অন্য কোনো পৃথিবীতে আপনি চলে এসেছেন. যদিও এসব এলাকায় বাইরের কারোর ঢোকাটা খুব কঠিন. কারণ প্রভাবশালীদের পান্ডারা সারাক্ষণই পাহারা দেয় এইসব জায়গা. খনি থেকে মাইকা সংগ্রহের এই পুরো ব্যাপারটাই তো বেআইনি। সেটাকে ধামাচাপা দিতে আয়োজনের কিন্তু কোনো অন্ত্র নেই. কয়লা বা সোনার খনির অবস্থানও মাটির নিচেই হয়. কিন্তু মাইকা খনির সাথে এসব খনির একটা বড়সড় পার্থক্য আছে. এই খনিগুলো আকারে ছোট. তাছাড়া যন্ত্রপাতির ব্যবহার এখানে হয় না বললেই চলে। পুরো ব্যাপারটা হয় হাতের শক্তিতে.
গর্ত খুরে খুঁড়ে খনি বানানো হয়. শুরু সেই গর্তে খুব কসরত করে নিচে নামতে হয়. উনিশ থেকে বিশ হলেই বিপদ. মাথার উপর মাটি আর পাথরের আস্ত ধসে পড়তে পারে. হয়ে যেতে পারে জীবন্ত কবর. যদিও ভেতরে যারা ঢোকে দিনে কুড়ি ত্রিশ বার. তাদের এসব গা সহে গেছে. এরকম ঘটনা এখানে প্রতিদিনই ঘটে বরং কোনদিন মাটি চাপা পরে কেউ আহত বা নিহত না হলেই মনে হয় ভাগ্যটা আজ বড় ভালো। স্বর্ণ বা কয়লা খনির সাথে মায়কা খনির আরো একটা পার্থক্য রয়েছে। মাইকা খনিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে একদমই বাচ্চা বাচ্চা ছেলে মেয়েরা যাদের বয়স সাত থেকে দশ বছরের বেশি নয় । শিশু শ্রমের এক নগ্ন অধ্যায় প্রতিদিন রচিত হয়। এইসব খুনি এলাকায় যে অনাচার নিয়ে দুনিয়াবাসীর মাথা ব্যথা খুব একটা নেই। ডলার খরচ করে নিজেকে সুন্দর দেখানোর জন্য শরীরে যেসব প্রসাধন সামগ্রী আপনারা ব্যবহার করেন প্রাণ হাতে নিয়ে অন্ধকার খনির ভেতর ঢুকে সেগুলোর কাঁচামালের যোগান দিয়ে এই বাচ্চাগুলো প্রতিদিন কত টাকা আয় করে জানেন? বিশ থেকে তিরিশ রুপি মাত্র । যেই টাকায় এক কেজি মোটা চাল কিনতেও হিমশিম খেতে হয় তাদের. কিন্তু এই অঞ্চলে অন্য কোন কাজ নেই. একটাই কাজ. খনি শ্রমিক হিসেবে মাইকা আহরণে যুক্ত হওয়া. তাই বাধ্য হয়েই এই শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ এই কাজটাতেই নিযুক্ত হতে হয়. দু হাজার ষোলো সালে থমসন রাইটার্স ফাউন্ডেশন এই মাইকা মাইনিং বা মাইকা আহরণ কাজের গোড়াটা খতিয়ে দেখতে চেয়েছিল. একটা ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং অপারেশন তারা চালিয়েছিল ঝাড়খণ্ডের একাধিক অঞ্চলে. যেসব তথ্য সেই রিপোর্টে উঠে এসেছিল সেগুলো শিউরে ওঠার মতই ভয়ঙ্কর. শুধু ঝাড়খণ্ডেই বাইশ হাজারেরও বেশি শিশু অবৈধভাবে মাইকা উত্তোলনের কাজে যুক্ত. এরা স্কুলে যায় না. শিক্ষার আলো থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত. দুই বেলা পেটে ভাতে থাকার জন্য প্রানন্ত সংগ্রাম করে এই অঞ্চলের মানুষ. আর তাই পাঁচ ছয় বছর বয়স হলেই বাড়ির শিশুদের কাজে লাগিয়ে দেয় তাঁরা. জানে কোনো একদিন হয়তো আচমকা সংবাদ আসবে মাটি আর পাথরের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছে তাদের আদরের ধন. কিন্তু কিচ্ছু করার নেই. দুটো বাড়তি টাকা ঘরে এলে জীবনটা যে আরো একটু সহজ হয়.
সেই চাহিদার কাছে প্রাণের মায়া সে তো বড় তুচ্ছ. বেশিরভাগ মাইকা এখনই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে. ভেতরে ভুতুড়ে একটা আবহ. অন্ধকার ভীষণ. টর্চ ছাড়া দেখা যায় না কোন কিছু. নিরাপত্তার কোন কোন বালাই নেই. কোন ধরনের প্রটেকশান ছাড়াই ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে ছেলে মেয়েরা. ঝুড়িতে করে তুলে আনছে বালু আর মাটি. সেই মাটিতে মিশে আছে খনিজ মাইকা. সেগুলো চালুনী দিয়ে চেলে বা হাত দিয়ে পরিষ্কার করে মাটি থেকে মাইকা আলাদা করা হচ্ছে. সারাদিনে এভাবে বারবার খনিতে ঢোকে. মোটামুটি এক কেজি মাইকা পাওয়া যায় । তাও যদি আট নয় ঘন্টা টানা কাজ করা হয় তাহলে । সেই এক কেজি মাইকা পঁচিশ থেকে তিরিশ রুপিতে কিনে নেয় খুনির লোকজন । এটাই এই বাচ্চাগুলোর সারাদিনের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের দাম । ওদের জীবনে কোনো ছুটি নেই নেই ঈদ, পুজা, আনন্দ, কিচ্ছু নেই । আছে শুধু হাড়ভাঙা পরিশ্রম. এই মাইকা শ্রমিকদের মধ্যে ভাগ্যবনে যারা বেঁচে থাকে তাদের জীবনটাও মরে যাওয়ার চেয়ে ভালো কিছু হয় না । আহত হলে তো সারা জীবনের জন্য পঙ্গু. আর যারা গুরুতর আহত হয় না তাদের মধ্যেও বেশিরভাগ শিশুই খুব অল্প বয়সে head injury তে আক্রান্ত হয়. প্রতিদিন আট থেকে নয় ঘন্টা করে ঝুঁকে বসে কাজ করতে হয় মাইকা খনিতে. আর তাই কয়েক বছরের মধ্যেই মেরুদণ্ড এবং কোমরের হার বিদ্রোহ করে বসে.
বাকি জীবন কাটাতে হয় এই সমস্ত সমস্যাকে সঙ্গে নিয়ে. শুধু ঝাড়খণ্ডেই প্রতিমাসে বিশ থেকে তিরিশ জন শিশু মারা যায় মাইকা খনিতে কাজ করতে গিয়ে. অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে একজন. কোনদিন কার পালা আসবে? কেউ জানে না কিন্তু মৃত্যুর এসব সংখ্যাকে কাগজে কলমে ধামাচাপা দেওয়া হয় সুনিপুণভাবে । এগারো বছরের পূজা বার্নার চোখের সামনে নিজের প্রিয় বান্ধবীকে মাটি চাপা পড়তে দেখেছে । এরপর কি হয়েছে সে আর যাব না ।অনেক লোকের ভিড় আর বান্ধবীর রক্তাক্ত দেহটা ভেতর থেকে বের করে নিয়ে আসার দৃশ্যটাই শুধু মনে আছে তার। একবার ভাবুন তো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সারাদিন কাজ করে মাত্র তিরিশ রুপি পারিশ্রমিক পেয়ে যে মাইকা তুলে আনছে পূজার মতো শিশুরা সেই মাইকাই আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করছে বাড়াচ্ছে আপনার সৌন্দর্য । আপনি কি প্রসাধনী মাখছেন? নাকি নিজের শরীরে মেখে নিচ্ছেন এই অবুঝ শিশুদের রক্ত. এই প্রশ্নটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার করুন. আর ততক্ষনে আমরা মেকআপ ইন্ডাস্ট্রির যে অন্ধকার চোরাগুলিতে ঢুকেছি সেটার শেষটা দেখে আসি. খনি থেকে শিশু শ্রমিকদের দিয়ে সব মাইকা সংগ্রহের পর সেগুলো পরিষ্কার করা হয়. তারপর জাহাজে করে সেগুলো চলে যায় অন্য দেশে বিশেষ করে চীনে. সেখানে আরো কয়েক দফার প্রসেসিং করার পর এই মাইকাকে গুঁড়ো করা হয়. সেগুলোকে ব্যবহার করা হয় নানা ধরনের মেকআপের মধ্যে. উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য নামিদামি প্রায় সমস্ত মেকআপ ব্র্যান্ডই তাদের প্রোডাক্টে মাইকা ব্যবহার করে.
প্রতিযোগিতার এই বাজারে কেউই কি তার কম্পিটিটারের চেয়ে পিছিয়ে থাকতে চাইবে বলুন? মজার ব্যাপার হচ্ছে ভারত সরকার কিন্তু জানেই না এসব মাইকা এখনিতে কাজ করা শিশুদের সংখ্যা কত? কেমন মানবেতর ও পরিবেশে তারা বেঁচে আছে. কতটা অনিরাপদ পরিস্থিতিতে তাদের কাজ করতে হচ্ছে. দু হাজার উনিশ সালে একটা সার্ভে চালানো হয়েছিল মাইকা খনিতে কত শিশু কাজ করে সেটা জানার জন্য. এখনো সেই সার্ভের রিপোর্ট কোথাও প্রকাশিত হয় নি. মেকআপ ইন্ডাস্ট্রিটা কয়েক বিলিয়ন ডলারের. বিশ্বজুড়ে এসব প্রোডাক্টের তুমুল চাহিদা. ক্রেতারা অকাতরে খরচ করছে নিজেদের ত্বককে একটু উজ্জ্বল দেখানোর জন্য ।নিজেদেরকে একটু সুন্দরভাবে সবার সামনে উপস্থাপনের বিষয়. অথচ সেই সৌন্দর্যের উৎস যেখানে সেই জায়গাটা ঢেকে আছে গাঢ় অন্ধকারে । দারিদ্রতা সেখানে নিত্যদিনের চিত্র. পৃথিবীর দুই প্রান্তে বিভেদ আর শ্রেণী বৈষম্যের দুই রকম গল্প রোজ লেখা হয়. এই beauty industry ও তার ব্যতিক্রম নয় মোটেও. দেরিতে হলেও চিত্রটা এখন একটু একটু করে বদলাচ্ছে. যদিও সেই বদলের গতিটা খুবই কম. বিখ্যাত প্রসাধনী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লরিয়ল এসটি লর্ডাল সহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা তাদের প্রোডাক্টে অথেন্টিক মাইকার ব্যবহার কমিয়ে কৃত্রিম মাইকের ব্যবহার করবে. দু হাজার বাইশ সালের পর তাদের প্রোডাক্টে তারা আর কোন অথেন্টিক মাইকে ব্যবহার না করার পরিকল্পনা করছে ।
রেস্পনসেবল মাইকা ইনিশিয়েটিভ বা এমআরআই নামের একটা মুভমেন্টও চালু করেছে তারা। শিশু শ্রমের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে তারা আর ব্যবসা করবে না বেশি দিন। এমনটাই আপাতত জানিয়েছে এই ব্র্যান্ডগুলো। আর যদি তারা অথেন্টিক মাইকা ব্যবহার করেও সেক্ষেত্রে মাইকার প্রাপ্তি স্থানে শ্রমিকদের যথাযথ মজুরি দেওয়া হচ্ছে কিনা শ্রম অধিকার রক্ষা করা বা শিশু শ্রম বন্ধ করার মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখবে তারা। কিন্তু এখানেও একটা বড়ো সমস্যা আছে কয়েক একদিন পর যদি ব্র্যান্ড গুলো প্রাকৃতিক মাইকার ব্যবহার বন্ধ করে দেয় তাহলে ঝাড়খণ্ডের বেশিরভাগ অঞ্চলের মানুষ বিপদে পড়বে. কারণ এই এলাকায় কৃষিকাজ হয় না. ব্যবসাও নেই. কয়লাখনিতে পুরুষেরা কাজ করে আর মাইকা আর খনিতে শিশুরা. এভাবেই জীবিকা আয় হয় এখানকার পরিবারগুলো. তাই এখানে করণীয় আছে সরকারের করণীয় আছে প্রসাধনী নির্মাতা ব্র্যান্ড গুলোরও ।
বেআইনিভাবে সংগৃহীত মাইকা আর না কিনে শ্রমিক অধিকার রক্ষার ওপর ব্র্যান্ড গুলো জোর দিলেই এখানে একটা ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে বাড়বে কর্মসংস্থান শিশু শ্রমও কমতে কমতে নেমে আসবে শূন্যের কোঠায় । কিন্তু মাইকা খনি ব্যবসায়ীদের এই সিন্ডিকেট ভাঙা আর বেড়ালের গলায় ঘন্টি বাঁধা দুটোই একই রকমের কাজ । তাই সেই পথে হাঁটতে সবার বড্ড আপত্তি । এই অঞ্চলে আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে চলেছে নোবেল বিজয়ী ভারতীয় কৈলাস সত্যার্থী । তার প্রতিষ্ঠিত কৈলাশ সত্যার্থী চিলড্রেনস ফাউন্ডেশন গত পনেরো বছর ধরে কাজ করছে মাইকা খনিতে কাজ করা শিশুদের নিয়ে. এই পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার চারশো শিশুকে এই খনি মাফিয়ার কবল থেকে উদ্ধার করে স্কুলে নিয়ে গেছে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা. ঝাড়খণ্ডের বুকে তারা বানিয়েছে child friendy ভিলেজ। সেই গ্রামে শিশুদের একচ্ছত্র আধিপত্য. শুধু তাই নয় শিশুদের বাবা মায়েরা এই ফাউন্ডেশন থেকে একটা মাসিক ভাতাও পান. নইলে টাকার লোভে বা অভাবের কারণে অনেকেই নিজেদের সন্তানকে স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সবার অলক্ষ্যে আবারও খুনির কাজে লাগিয়ে দেবেন. মজার ব্যাপার হচ্ছে সরকারি বেসরকারি অনুদানের পাশাপাশি কৈলাশর সত্যার্থী ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগে টাকা ঢালছে একটি বিউটি প্রোডাক্ট ব্র্যান্ডও. আমেরিকান কোম্পানির এসটি লডার. যারা নিজেরাই তাদের প্রোডাক্টে মাইকা ব্যবহার করে ।তাঁরাই এই শিশুদের জীবন উন্নয়নের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা ডোনেশন দিচ্ছে এই প্রোজেক্টে. এটা হয় তো তাদের পাপ মোচনের সামান্য একটা চেষ্টা.
ফ্যাশন ডিজাইনার এবং বিউটি এক্সপার্ট ক্যারি হ্যামার একটা কথা বলেছিলেন. দা বিজনেস অফ বিউটি ইজ ভেরি অ্যাঙ্গিল. beauty production এর ব্যবসার আড়ালে লুকিয়ে থাকা অন্ধকার জগতের গল্পটা জানলে এই কথাটাকে ধ্রুব সত্যি বলে মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক. নিজেকে সুন্দর দেখানোর জন্য যে মেকআপটাই আপনি ব্যবহার করেন না কেন? Google করে দেখুন সেটার উপাদানের মধ্যে মাইকার উপস্থিতি থাকবেই. যে আমরা এসব প্রোডাক্ট ব্যবহারের সময় দু ফোঁটা রক্তের উপস্থিতি হয়তো আপনি টের পাচ্ছেন না কারণ এসব ঘটনা খুব সন্তর্পনে লুকিয়ে রাখা হয়েছে আপনার কাছ থেকে । বিলিয়ন ডলারের এই ইন্ডাস্ট্রিতে কালো কোনো দাগ পড়ুক সেটা তো রাঘব বোয়ালরা চাইবে না । কিন্তু এই দাগ এমনই অন্ধকারে ঠাসা দুনিয়ার কোন বিউটি প্রোডাক্ট বা মেকআপ দিয়ে সেটা ঢেকে রাখা যাবে না কোনোদিনও কখনোও।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন