হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার গল্পের কথা কেনা না জানে। ইঁদুর নিয়ে কি সংকটেই না ছিল হ্যামিলানবাসী। পরের কাহিনী নিশ্চয়ই মনে আছে? না আমরা আজকে বাঁশিয়ালার গল্প বলবো না। কিন্তু সেই গল্প অনায়াসেই সত্য হয়ে যেতে পারে আমার ভাবনার সাথে । আসলে ঘটছে ও তাই আজকাল অহরহ। আর এজন্য প্রয়োজন কেবলমাত্র এক চিমটি স্কোপোলামিন।
কি এই স্কোপোলামিন? বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ড্রাগস কি ? অনেকেই হয়তো বলবেন কোকেন বা ক্রিস্টাল ম্যাথের কথা । কিন্তু না বিশ্বের সবচাইতে ভয়ঙ্কর ড্রাগস ও স্কোপোলামিন যা পরিচিত ডেভিল স্প্রেড বা শয়তানের নিঃশ্বাস নামে।
এর শুধুমাত্র এক চিমটি পরিমাণ পাউডার পারে আপনাকে নিজের ওপরে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণহীন করে দিতে। ধরুন আপনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। এমন সময় একজন লোক এসে আপনাকে এক টুকরো কাগজ দেখিয়ে কোন একটা ঠিকানার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। এবং আপনি সাথে সাথেই আপনার চিন্তা শক্তি হারিয়ে ফেললেন। হারিয়ে ফেলেন স্ব-ইচ্ছায় নড়াচড়া করার শক্তি টুকু। কিভাবে সম্ভব? বুড়া চেরো নামে এক গাছের ফুলের বীজ থেকে স্কোপিং ড্রাগ বা ডেভিল স্প্রেড তৈরি হয়। এই গাছকেও বলা হয় ডেভিলস প্লান্ট বা শয়তানের গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো দাঁতুরা।
গাছের বীজ গুলোকে গুঁড়ো করে কেমিক্যাল প্রসেসের মাধ্যমে তৈরি করা হয় বরুণ দাঙ্গা বা স্কোপাডিক। কোথায় তৈরি হয় এই ড্রাগ তা সহজেই হয়তো আন্দাজ করতে পারছেন আপনি। দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়াতে । কলম্বিয়া দেশটি চুরি, ছিনতাই সহ সকল ধরনের অনৈতিক কাজের দিক থেকে পৃথিবীতে সবচেয়ে এগিয়ে আছে। ওয়েলকাম টু কলম্বিয়া। পরিসংখ্যানও বলে বিশ্বের প্রতি তিনটি অপহরণের মাঝে একটি ঘটে কলাম্বিয়াতে। কলম্বিয়াকে ডাকা হয় মাদকের রাজধানী।
স্কোপোলামিন ড্রাগটির ওজন এবং ঘনত্ব একেবারেই কোকেনের মতো। একগ্রামস কোপানোমিন এবং এক গ্রাম কোকেন দেখতে ঠিক একই রকম। কিন্তু পার্থক্য হল মাত্র এই এক গ্রাম স্কোপমিনি পনেরো জন মানুষকে হত্যা করতে সক্ষম। সারা বিশ্বে প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ এই ড্রাগের ভিক্টিম যা দিন দিন বাড়ছে ভয়ানকভাবে। স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য ড্রাগের মতো এর ব্যবহারও চিকিৎসার ক্ষেত্রে খুবই অল্প। আর এক মিলিগ্রাম ডুস ব্যবহৃত হয় সি সিগনেসের মেডিসিন হিসেবে। স্কোপোলামিন চামড়ার মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে। ফলে অপরাধ করাও সহজ এই ড্রাগের মাধ্যমে। সাধারণত মহাকাশে ভ্রমণকারী অ্যাস্ট্রোনটদের মরশুম সিগনেস কাটানোর জন্য নাসা তাদের ওপর শূন্য দশমিক তিন তিন মিলিগ্রাম স্কোপোলামিন প্রয়োগ করে। তবে এটির ছয় থেকে সাত মিলিগ্রাম ডোজ যদি কোনো সাধারণ মানুষের ওপরে ব্যবহার করা হয় তবে সে রাতারাতি পরিণত হয়ে যাবে একটা জুম্বিতে। তাকে দিয়ে যা খুশি করানো যাবে । আর যদি দশ মিলিগ্রাম বা তার বেশি ডোজ ব্যবহার করা হয় তাহলে ব্যক্তিটির রেসপিরিটি ফেলিওর হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এটি অনৈতিক কাজেই ব্যবহৃত হয় সবচেয়ে বেশি। অপরাধীরা সাধারণত চুরি, ধর্ষণ বা কাউকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে এই ড্রাগ ব্যবহার করে। পাতলা এই পাউডারটি ভিকটিমের শরীরে প্রবেশ করানো হয়। কোন কাগজ বা ভিসিটিং কার্ডের মাধ্যমে। খাবারের মাধ্যমে মুখের ওপর ফু দিয়ে অথবা অনেক সময় হ্যান্ডশেক করার সময় ড্রাগ মেশানো সূক্ষ্ম পিন ভিক্টিমের হাতে ফুটিয়ে। ভিক্টিম কিছু বুঝে ওঠার আগেই এই ড্রাগ দ্রুত মিশে যায় রক্তের সাথে ভিক্টিম তার নিজস্ব চিন্তাশক্তি হারিয়ে ফেলে সে শুধুই অন্যের আদেশে কাজ করতে পারে। অর্থাৎ ভিকটিমকে যদি বলা হয় নিজেকে খুন করে ফেলতে ভিক্টিম ট্রাই করবে। এই ড্রাগটি ব্যবহারের ফলে কিছু সময়ের জন্য ভিক্টিমের মেমোরি সম্পূর্ণ ব্লক হয়ে যায়।
সে নতুন করে কিছু ভাবতে পারে না এমনকি ড্রাগড অবস্থায় তার সাথে কি ঘটেছে তার কিছুই সে আর মনে করতে পারে না । এমনকি ভিক্টিমদের হিতাহিত জ্ঞান ফিরে আসবার পর তারা মামলাও করতে পারে না কারণ অপরাধী ব্যক্তির চেহারা বা নাম কিছুই তারা মনে করতে পারে না । স্কোপ আলোমিক ড্রাগের শিকার এক কলম্বিয়ান তরুণ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন তার সম্পূর্ণ এপার্টমেন্ট খালি। দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন আগের রাতে সেই তরুণ আরো দুইজন যুবক সহ নিজেই তার এপার্টমেন্টের সকল ফার্নিচার বের করে ভ্যানে তুলে দিয়েছেন। কিন্তু তার এসবে কিছুই মরেনি অর্থাৎ এই ড্রাগ ব্যবহার করে যে কেউ দিন দুপুরে আপনার সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে চলে যাবে এবং কেউ সন্দেহ করতে পারবে না।
ড্রাগ রক্তে মিশে যাওয়ার পর আপনাকে যে যা বলবে আপনি বিনা বাক্য ব্যয় করে আপনি তাই করতে বাধ্য। স্কোপোলামিন এতটাই হিপনটাইজ করে ধরা সই করে যে কোন ব্যক্তিকে। স্কোপোলামিন কিন্তু আজকের আবিষ্কার নয়। সেই উনিশশো দশ সালে ডক্টর রবার্ট হোস সর্বপ্রথম লক্ষ্য করেন যে অবচেতনকারী ঔষধ কোপালুমিন রোগীর দেহে প্রবেশ করালে রোগী এমন এক মানসিক অবস্থার মধ্যে প্রবেশ করে। রোগী এক ধরনের ঘরের মধ্যে নিচ থেকে সকল সত্য গল্পের মতো বলতে শুরু করে। অর্থাৎ কোন মানুষের ওপরে স্কোপোলামিন প্রয়োগ করলে মানুষটি আপনা আপনি আপনি সকল সত্য প্রশ্নের উত্তরের প্রেক্ষিতে বলে দেয়। ডক্টর রবার্ট হোস নিরাপরাধ মানুষ ষড়যন্ত্রের শিকার হলে তাকে যন্ত্রণাদায়ক জিজ্ঞাসাবাদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে গোপন তথ্য আদায় করার জন্য সেনাবাহিনীর ডাক্তারগণ শত্রুপক্ষের স্পাইদের ওপর ব্যাপক হারে প্রয়োগ করতে থাকেন এই ওষুধগুলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেই এই ড্রাগ গ্রুপ সিরাম নামে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। বর্তমানে অনেক দেশে এই ট্রাক আইন সঙ্গতভাবে প্রয়োগ করা হয়। ফ্রুট সিরাম মানবদেহে ইনজেকশনের মাধ্যমে সরাসরি প্রবেশ করানো হয়। অথবা ট্যাবলেট হিসেবে মুখে বা বায়ু পথে ব্যবহার করা হয়। পরে এটি রক্তে প্রবেশ করে স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে স্পাইনাল ক্রর্ড এ প্রবেশ করে। স্পাইনাল করর্ড থেকে ওষুধ, মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল কোয়ার্টিক্স এ প্রবেশ করে। মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী অংশগুলো ট্রুপ সিরামের প্রভাবে প্রভাবিত হয়। এর ফলে একই সাথে একাধিক সংকেত মস্তিষ্কে প্রেরিত হলে ড্রাগের প্রভাবে শুধু একটি সংকেত বিশ্লেষিত হয়। বাকি সংকেতগুলো থাকে উপেক্ষিত। ট্রুথ সিরামের প্রভাবে হেলোসিনেশান তৈরি হয়। এ সময় মানুষ কোন কথা বলতে থাকলে স্মৃতি থেকে শুধু সত্য কথাই বলতে থাকে। চিন্তা করে মিথ্যা বলতে পারে না।
আমরা সবাই জানি, মিথ্যা কথা বলার সময় চিন্তা করে সাজিয়ে গুছিয়ে বলতে হয়। ট্রুথ সিরাম প্রয়োগ করলে মস্তিষ্কের একসাথে একাধিক চিন্তা করার ক্ষমতা লোভ পায়। তাই মানুষ মিথ্যা না বলে শুধুই বলে সত্য কথা। ট্রুথ সিরাম কি সত্যিই কাজ করে? বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় গ্রুপ সিরাম পঁয়তাল্লিশ শতাংশ ক্ষেত্রে বেশ ভালো কেরামতি দেখায়। কিন্তু বাকি ক্ষেত্রে এটি ভালো কাজ করে না। কুৎসি নামের প্রভাবে অপরাধী যে জবানবন্দি দেয় তার সত্যতা. অনেক দেশের আদালত কর্তৃক গৃহীত নয়। আবার তথ্য অনুসন্ধানকারী যখন অপরাধীর কাছ থেকে তথ্য গ্রহণ করে তখন সে বুঝতেই পারে না যে সেই তথ্যটা সত্য না মিথ্যা? অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে সত্যি সত্যি যদি কাজ করে তাহলে কেন সবসময় এই ট্রুপসিরাম ব্যবহার করা হয় না? বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে ট্রুথ সিরামের প্রভাবে যে হ্যালুসিনেশান তৈরি হয় তা অপরাধীর মস্তিষ্ককে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অনেকে তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। কেউ বা চিরদিনের মতো পাগল হয়ে যায়। অনেকে কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলে। একজন অপরাধীকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে এ ধরনের শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার আইনসংগত নয়। এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যায়ে পরে। আজি আজ এই পর্যন্তই. কেমন লাগলো ডেভিল স্প্রেড বা শয়তানের নিঃশ্বাস তা কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন