আপনি মানুষের সামনে খুব হাসিখুশি থাকেন বলেই মানুষ আপনাকে ভেবে নিল. আহ মানুষটা কি ভিল দরিয়া? মানুষটা খুব মিশুক. এক্সট্রোভার্ট।
কিন্তু আপনি আসলে ভেতরে ভেতরে উপলব্ধি করেন মানুষ আপনাকে যা ভাবে তা আপনি নন মানুষের সামনে হয়তো কোনোরকমে মানিয়ে নেন। কিন্তু এত হাঙ্গামা আসলে আপনার পছন্দ নয় । আপনি আসলে নিজের ভুবনে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন নিজস্ব সার্কেলে । কিন্তু এমন কিন্তু এমনটা কেন? কিছু মানুষের ভেতরে দৈত সত্তা খুব বেশি কাজ করে. মনের ভেতর আর বাইরের উপস্থাপনার একটা দ্বন্দ্ব চলতেই থাকে. মানুষ আপনাকে যতটা introvert ভাবে মনে করে. কি ভাব? আপনি তেমন নাও হতে পারেন । আপনিও জোৎস্ই জায়গা পেলে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে এক্সপ্রেস করতে পারেন । এই যে দইতো একটা বৈচিত্র নিয়ে মানুষ বেঁচে আছে এটাকে তাহলে কি বলা যাবে? এই ধরণের মানুষগুলো আসলে এক্সট্রোভার্ট আবার পুরোপুরি ইন্ট্রোভার্ট ও না ।
তারা মাঝামাঝি একটা অবস্থানে থাকে. এই মানুষগুলোকে বলা হয় হ্যান্ডবিভার. মজার ব্যাপার হল প্রচলিত একটা ধারণা আছে যে এক্সট্রোভার্টরা সেলস কমিউনিকেশানে খুব ভালো হয়. কিন্তু গবেষণায় দেখা যায় উল্টো চিত্র. তিনশো সেলস পারসনের উপর গবেষণা করে দেখা গেছে যারা ইন্ট্রোভার্ট এবং এক্সট্রোভার্ট এর মাঝামাঝি অর্থাৎ হেমবিভার্ট. তারাই আসলে সেলস ডিপার্টমেন্টের সেরা. মানুষ হিসেবে আপনি আসলে কেমন? এক্সট্রোভার্ট ইন্ট্রোভার্ট. নাকি হেম্বিভার্ট. এদের কোনটি হওয়াটা আমাদের জন্য সুবিধাজনক. ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন সেই জবাব গুলোই মিলবে আজ। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার পঁচিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ মানুষ ইন্ট্রোভার্ট. একজন ইন্ট্রোভার্ট ব্যক্তি হচ্ছেন তিনি. যিনি কিনা তাঁর নিজের সঙ্গ সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেন. এমন ধরনের মানুষ যে নিজেকে খুশি করেই বাঁচতে পছন্দ করে. ইন্ট্রোভার্ট ব্যক্তিদের কমন একটা অভ্যাস হচ্ছে এরা গাড়ির জানালার পাশের সিটে বসলে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে. গাড়ির গতিবেগ কত স্পিকারে কোন গান বাজছে অথবা যাত্রীরা কি নিয়ে কথা বলছেন এসবের চাইতে বাইরের প্রাকৃতিক দৃশ্যে মন দেওয়াটা তার জন্য অনেক বেশি সুবিধাজনক ।
ইন্ট্রোভার্ট ব্যক্তিরা একটু চাপা সহবের হয় তারা শ্রোতা হিসেবে বেশ ভালো । এরা নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখতে ভালোবাসে. সাধারণত চুপচাপ লাজুক এবং স্বল্পভাষী স্বভাবের হয়ে থাকে. ইন্ট্রোভার্ট দের বন্ধুবান্ধবের সংখ্যা থাকে কম. তবে বন্ধুর জন্য এরা জীবন দিয়ে ফেলতে পারে. কোন কাজ করার আগে চিন্তাভাবনা একটু বেশি করেই যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়. এরা সামাজিক অনুষ্ঠান সযত্নে দিয়ে চলে. বেশিরভাগ ইন্ট্রোভার্ট হয়ে থাকেন পড়ুয়া. ইন্ট্রোভার্ট লোকজন খুব সহজে কারো সাথে নিজের ব্যাপারে কথা বলেন না. তবে মন মতো কাউকে পেলে তার সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলেই কাটিয়ে দিতে পারেন. অন্যদিকে এক্সট্রোভার্ট লোকজন একদম অপরিচিত কারো সাথেও প্রথম দেখায় খুবই আন্তরিকতার সাথে আলাপ জুড়ে দিতে পারে । রাজনৈতিক ক্রিকেট বাজারের হালচাল তাদের শুধু একটা টপিকের দরকার হয় এমনকি কখনও কখনও সামনের লোকটি তার কথা মনোযোগ দিয়ে আদৌ শুনছেন নাকি এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন এটিও একজন এক্সট্রা ভাটের মাথায় থাকেন না। এ ধরনের ব্যক্তিরা মিশুক স্বভাবের হয় যার ফলে সবার সাথে মিশতে পারেন খুব সহজেই ভাবিয়া করিও কাজ এই প্রবাদটি এক্সট্রোভার্ট মানুষের জীবনে খুব কমই দেখা যায় । হুজুগে পড়ে এরা নানা কান্ডকারখানা ঘটিয়ে ফেলে. যেকোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে হুট হাট করে. আর যে কারণে অনেক সময় তাদের বেশ ঝামেলাতেও পড়তে হয়. এরা একা থাকতে পারে না একদমই. এমনকি প্রয়োজনে কোথাও একা যেতেও স্বচ্ছতা বোধ করে না. সবসময় সঙ্গী হিসেবে কাউকে তাদের লাগবেই লাগবে. এ ধরনের মানুষ বেশি কথা বলতে পছন্দ করে সাথে অন্যদের কথা শোনেন খুবই কম অর্থাৎ শ্রোতা হিসাবে কিন্তু এরা খুব একটা ভালো নন।
তবে এক্সট্রা ভার্ট লোকজনের মধ্যে নেতৃত্ব গুণ থাকে অনেক বেশি । আগ বাড়িয়ে তারা দায়িত্ব কাঁধে নেন অন্যের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন. এরা সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করে বিপদে পড়েন. কোন কথা পেটের ভেতর রাখতে পারে না. নিজের মনে যা কিছু আছে সব যে কাউকে বিশ্বাস করে গড়গড় করে বলে দেয়. সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এক্সট্রোভার্টদের উপস্থিতি খুব বেশি. এরা নিজেদের প্রতিভাকে মানুষের সামনে প্রকাশ করতে ভালোবাসে. আর ভালোবাসে বাহুবলিতে।. এক্সট্রোভার্ট এবং ইন্ট্রোভার্টের বাইরের আর এক প্রজাতির মানুষ আছে যাদেরকে বলা হয় হ্যামবিভার্ট। এরা নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হয়. সহজেই তবে সহজেই কাউকে ঘনিষ্ঠ বানায় না. বাইরে যেতে এদের কোন আপত্তি নেই. তবে ঘরে ফেরাটা তাদের কাছে অনেক স্বস্তিদায়ক. ambivert খুব দ্রুত পরিস্থিতি পড়তে পারেন. তারা ভেতরে যেমনই হোক দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন পরিস্থিতির সাথে. প্রফেশনাল লাইফে একদমই সেখানকার মত চলেন তাঁরা. সেখানে পেশার খাতিরে নিজের রং বদলাতে সমস্যা হয় না একদমই. কিন্তু নিজের বন্ধুদের সামনে তারা আবার একেবারেই আলাদা. একদম রিয়েল. নিজস্ব রূপে পরিণত হয়ে যায় তখন. আবার ধরুন একজন মানুষ অনলাইনে খুব অ্যাক্টিভ। দিনে দশ বারোটা ফেসবুক পোস্ট দিচ্ছেন. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি দারুন জনপ্রিয়. সেই লোকটা বাস্তব জীবনে হয়তো ভীষণ চাপা স্বভাবের. ফেসবুক ফ্রেন্ড বা ফলোয়ারদের সাথে কোথাও দেখা হলে নিজের পরিচয়টাও দেন না. কেউ চিনে ফেললে লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে চান. এরাও কিন্তু ambivert।
অক্সফোর্ড ডিকশেনারিতে ambivert এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে ambivert এমন এক প্রকার মানুষ যারা একই সাথে ইন্ট্রোভার্ট এবং এক্সট্রোভার্ট উভয়ের আচরণকে ধারণ করে এমবিভাগধর্মী মানুষেরা তাদের জীবনের চলার পথে নিজের ব্যক্তিগত ব্যক্তিগত বিষয়ে তুলনামূলক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করতে চান. তবে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এরা কিন্তু বেশ খানিকটা সময় নেন. পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার আটত্রিশ শতাংশ মানুষ ambivert. ambivert রা সবার সাথে মেশিন ঠিকই কিন্তু ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন হাতে গোনা. অল্প কিছু মানুষের সাথে এবং তাদের জন্য নিজেদের সব কিছু উজাড় করে দিতেও তারা পিছুপা হন না । ইন্ট্রোভার্টরা চুপচাপ সব কিছু দেখে পর্যবেক্ষণ করে যায় কিছুই বলে না আবার এক্সট্রোভার্ট এত কিছু সচেতন ভাবে খেয়াল করে না সব সময় কিছু না কিছু নিয়ে মেতে থাকে । এই জায়গাতেই ambivert রা আলাদা. মানসিকতার দিক দিয়ে এক্সট্রভার্ট বা ইন্ট্রোভার্টদের চাইতে ambivert রা বেশ balance. মানসিকতার এই তিনটি ধরনের মধ্যে আপনি কোনটি সেটি নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন এতক্ষণে ।
উঁকি দিচ্ছে তিন ধরনের মানুষের মধ্যে তারা সবচেয়ে ভালো তারা সবচেয়ে এগিয়ে এই প্রশ্নের জবাব যারা আশা করছেন তাদের উত্তেজনায় পানি ঢালার কাজটা আমাকেই করতে হচ্ছে । কারণ এই তিন ধরনের মানুষের মধ্যে কেউই সেরা নয় কেউ কারো চেয়ে এগিয়ে নয় এক একটা মানুষ এক এক রকম । ভিন্ন ভিন্ন তার আচার তার ভাবনা তার স্বভাব. মানুষের এই বৈচিত্রই কিন্তু মানুষের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য. আমাদের সমাজে ইন্ট্রোভার্ট মানুষকে মুডি ইন্ট্রোভার্ট হেয় করার একটা প্রবণতা আছে. আপনি যদি ইন্ট্রোভার্ট হন আপনার জন্য কোন অনুপ্রেরণা কিংবা মোটিভেশনের প্রয়োজন নেই. কারণ আপনার ব্যক্তিত্বই অন্তর্মুখিতা. এটা কোনো অস্বাভাবিকতা নয়. Introvert মানুষ ও সফল হতে পারে কিনা বিখ্যাত মানুষজনের মধ্যে কে কে ছিল এসব জেনে. মোটিভেশন নেওয়ার কোনো দরকার নেই কিংবা মোটিভেশনের প্রয়োজন নেই কারণ আপনার ব্যক্তিত্বই অন্তর্মুখী। এটা কোন অস্বাভাবিকতা নয়। ইন্ট্রোভার্ট মানুষও সফল হতে পারে কিনা বিখ্যাত মানুষজনের মধ্যে কে কে ছিল এসব জেনে মোটিভেশন নেওয়র কোনো দরকার নেই ।
আপনার আপনার কেবল জানা প্রয়োজন আপনি কি ইন্ট্রোভার্ট নাকিব একটু বেশি লাজুক। আপনি হয়তো আরেকটু আত্মবিশ্বাস পেলে নিজেকে আরো সামাজিক করতে পারবেন. সেক্ষেত্রে হিসাবটা আলাদা হয়ে যায়. কারণ ইন্ট্রোভার্সন আপনার ব্যক্তিত্ব, আর লজ্জা স্রেফ একটা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বলা যায়. আপনি ইন্ট্রোভার্ট হলে জেনে রাখুন. আপনি ভাগ্যবান. আপনি নিজেকে বেশি সময় দিতে পারছেন আপনি চাইলেই নিজের মতো মানসিক শান্তি অর্জন করে নিতে পারবেন আপনার বহুল ব্যবহৃত মস্তিস্ক এবং তার ক্ষমতা দিয়ে।
গুগলে সার্চ দিলে হাজার হাজার কনটেন্ট পাবেন কেন মানুষ হিসাবে ambivert সেরা । এসব বিষয়ে আমরা বিশ্বাস করি ambivert বা introvert নয় প্রতিটি মানুষই সেরা তার স্বভাব যেমনই হোক না কেন এই বিশ্বাসটা নিজের ভেতর রাখুন সফল আপনি অবশ্যই হবেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন