সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইউক্রেন- রাশিয়া যুদ্ধে পশ্চিমা মিডিয়ার দ্বিচারিতা? পশ্চিমের মগজে লুকিয়ে থাকা বর্নবাদের দুর্গন্ধ।

    উনিশশো একানব্বই সাল. সোভিয়েত ইউনিয়নে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মিখাইল গর্ভাচেবের পরিবর্তিত নীতির কারণে স্নায়ু যুদ্ধের শেষ প্রান্তে এসে ভেঙে গেল সোভিয়েত সাম্রাজ্য. পনেরোটি আলাদা আলাদা স্বাধীন দেশের জন্ম হলো সোভিয়েত ভেঙে । এর আগের বছরই বার্লিন দেয়ালের পতন হয়েছে । কমিউনিস্ট ভাবধারার পূর্ব জার্মানি এসে পুঁজিবাদী ধারণার পশ্চিম জার্মানির সাথে একাত্ম হয়েছে। পরের বছর রুশ সাম্রাজ্যের পতন ঘটলো আর সেই সাথে শেষ হলো স্নায়ু যুদ্ধ। পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা যখন হুইস্কির গ্লাসে চেয়ারস বলে চুমুক দিচ্ছেন. সেন পিটাস বার্গে বসে এক তরুণ কেজিবি এজেন্ট তখন স্তব্ধ হয়ে বসে আছে. কে জানে সেই এজেন্ট হয়তো মনে মনে সেদিন শপথ করেছিলেন. যেভাবেই হোক একদিন সোভিয়েত ইউনিয়নকে আবার তিনি এক করবেন. আমরা জানি না এমন কোন প্রতিজ্ঞা সেদিন করা হয়েছিল কিনা. কিন্তু হাজার বাইশ সালের মার্চ মাসে দাঁড়িয়ে আপনি যখন শুনবেন সেই কেজিবি এজেন্টের নাম ছিল ভালাদিমের পুতিন তখন মনের মধ্যে এমন ধারণার জন্ম পাওয়াটাই কিন্তু খুব স্বাভাবিক।



 এ তো গেল ফিকশনের কথাবার্তা. এবার আসা যাক যা ঘটেছে ঘটছে এবং যা ঘটতে পারে সেসব নিয়ে বিস্তারিত আলাপে. ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনারা আক্রমণ করেছে স্থল এবং আকাশ পথে যুদ্ধ হচ্ছে. ইউক্রেনের বেশ কিছু এলাকা রাশিয়ার সেনাদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে এবং বিস্ময়কর ভাবে. ইউক্রেন এখনো যুদ্ধে টিকে আছে এবং বেশ ভালোভাবে। পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন আদায় সক্ষম হয়েছে ইউক্রেন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নানা রকমের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাশিয়াকে কাবু করতে চাইছে। এসব তো সবাই জানেন. কিন্তু কেন হঠাৎ বেজে উঠল যুদ্ধের দামামা? এই যুদ্ধের পটভূমিই বা কি? পুতিন কি ইউক্রেন দখল করেই থামবেন নাকি ? 




হিটলারের মত তিনিও আগ্রাসী নীতিতে হাত বাড়াবেন ইউরোপের বাকি অংশ কব্জা করার ব্যাপারে. চলুন গোলক ধাঁধার এই রাজ্যে হারানো যাক. বেশ অনেকদিন ধরেই জল্পনা-কল্পনা ছিল রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের আশঙ্কা নিয়ে. এ বছরের শুরুতেই রাশিয়া এক লাখের বেশি সৈন্য ইউক্রেনের উত্তর ও পূর্ব সীমানায় মোতায়েন করেছিল. আর তখনই যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট করে বলেছিল রাশিয়া হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে. তবে সেই হামলা ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র কার্যকর কোনো কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়নি. যুক্তরাষ্ট্রের মতো একইভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন শঙ্কা প্রকাশ করলে ইউক্রেইনকে বাঁচানোর কোনো পদক্ষেপ তারা নেয় নি. যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল চোদ্দই ফেব্রুয়ারী রাশিয়ায় ইউক্রিন আক্রমণ করতে পারে। কিন্তু সেদিন কিছুই ঘটেনি বরং সেনা মোতায়েন করা কিছু জায়গা থেকে রাশিয়া তাদের সেনাদের সরিয়ে নিয়ে ছিল। আমেরিকার গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়ে তখন একজোট বেশ হাসাহাসিও হয়ে ছিল। কিন্তু সব হিসাব নিকাশ পাল্টে গেল চব্বিশ ফেব্রুয়ারী. পুতিন এর নির্দেশে ভোরবেলা রুশবাহিনী ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করল. রুশ বিমান থেকে ইউক্রেনের সামরিক লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত হানা শুরু হলো।



 অন্যদিকে রুশ স্থলবাহিনীও উত্তর ও দক্ষিণের সীমানা অতিক্রম করে ঢুকে পড়ল ইউক্রেনে. ইউক্রেনের উপর হামলার জের ধরে ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপি ইউনিয়ন, জাপান সহ একাধিক দেশ রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে. এসব নিষেধাজ্ঞার বেশিরভাগই অর্থনীতির।


 তারা রাশিয়ার উপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের মাধ্যমে দেশটিকে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন. সব মিলিয়ে যে বাস্তবতা দাঁড়িয়েছে তা হল প্রায় এক চেটিয়া ভাবে পুনরুদ্ধিত রাশিয়া এবং একটি ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষামূলক পশ্চিমের মধ্যে ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বেঁধে গেছে. ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের এই প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে. দু হাজার চোদ্দ সালে রাশিয়া ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়া দখল করে নেয়. এর মাধ্যমেই ইউক্রেন সংকট শুরু. তবে শুরুর গল্পটা জানতে হলে আরো অতীতে ঢু মারতে হবে. ক্রিমিয়া দখলেরও কিন্তু একটি গোড়ার ইতিহাস আছে. একটা সময় ইউক্রেন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের অংশ ছিল. প্রায় দুশো বছর ধরে ক্রিমিয়া উপদ্বীপের মালিকানা ছিল রাশিয়ার হাতে.

 উনিশশো চুয়ান্ন সালে তৎকালীন সোভিয়াত নেতা নিকিতা ক্রিমিয়া মালিকানা ইউক্রেনের হাতে হস্তান্তর করেন. তখন তিনি ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারেননি যে কয়েক দশকের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে. ইউক্রেন স্বাধীন হওয়ার পর পূর্ব ইউরোপের আরো কিছু কমিউনিস্ট দেশ এবং সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের মতো ইউক্রেনেও দুটি রাজনৈতিক ধারা বেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে. একটি অংশ চায় পশ্চিম ইউরোপের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে. ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিতে এবং নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য নেটো সামরিক জোটের সদস্য হতে. কিন্তু অপর অংশ. রুশ প্রভাব বলয় থাকার ভীষণ পক্ষপাতী. কারণ ইউক্রেনের জনসংখ্যার বিরাট একটা অংশ রুশ ভাষাভাষি. দু হাজার চোদ্দ সালে ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টোরিয়ানো কোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন বিক্ষোভের মুখে. এরপর তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়। প্রেসিডেন্ট ভিক্টোরিয়ানো কোভিচ দুই নৌকায় পা দিয়ে চলতে চেয়েছিলেন. তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে মাখামাখি করছিলেন. কিন্তু আবার মস্কোকেও ভক্তি, শ্রদ্ধা দেখিয়ে চলছিলেন. তার পতনের পর যারা ক্ষমতায় আসে এমন কিছু পদক্ষেপ নেয় পুতিনকে ক্ষুব্ধ করে. ইউক্রেনের ভেতরে যে রুশ অধ্যুষিত অঞ্চল সেখানে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হলে মস্কো তাদের সমর্থন দেয়. এই বিদ্রোহীদের সমর্থনে এরপর রুশ সৈন্যরা হস্তক্ষেপ করে. এক পর্যায়ে ক্রিমিয়া অঞ্চল দখল করে সেটিকে নিজেদের দেশের অংশ বলে ঘোষণা করে রাশিয়া. 





রাশিয়া একটা বিরাট দেশ. বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ. এগারোটি টাইম zone জুড়ে যার বিস্তৃতি. কিন্তু দেশটির জনসংখ্যা মাত্র চোদ্দ কোটি চল্লিশ লাখ. নাইজেরিয়া বা পাকিস্তানের চেয়েও অনেক কম. এত বড় একটি দেশের ক্রিমিয়া দখল করে নিজের সীমানাভুক্ত করার কি খুব দরকার ছিল? এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে. রাশিয়া যত বড় দেশই হোক তাদের একটাই সমস্যা. সারা বছর সচল রাখা যায় এমন উষ্ণ পানির গুরুত্বপূর্ণ বন্দর তাদের প্রায় নেই বললেই চলে. ক্রিমিয়া সেবাস্কপারে রাশিয়া যে নৌকাটি সেটি কৌশলগত কারণে তাই রাশিয়ার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ. বালটিক সাগরে রাশিয়ার ঢোকার পথ হচ্ছে এই বন্দর. সেটি হাতছাড়া হতে দিতে তারা কোনোভাবেই রাজি হয়নি. কাজেই ইউক্রেন যে ন্যাটোর সদস্য হবে সেটা রাশিয়া কোনোভাবেই মানবে না. রাশিয়ার আপত্তি থাকা সত্ত্বেও ইউক্রেনকে নেটো ভুক্ত করার প্রচেষ্টা চালানো হয়. আর তখনই বিড়ম্বনা থেকে বিরোধের সূচনা হয়  ইউক্রেন কে কেন রাশিয়া নিজেদের কুক্ষিগত করে রাখতে চায় এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে অনেকগুলো কারণ সামনে আসবে. সেখানে ভুরাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সামরিক. অনেক কারণেই পাওয়া যাবে. 



প্রথমত খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ ইউক্রেন. তাছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম কৃষি অঞ্চলও ছিল এই ইউক্রেন। দ্বিতীয়ত ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ছাড়াও পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার পর সবচেয়ে বড় দেশ হিসাবে ইউক্রেন রাশিয়ার ভৌগোলিক নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর  আর তৃতীয়ত রুশ জাতির অভিজ্ঞতা বলে পূর্বে রাশিয়ার উপর যতবার বিদেশিদের আক্রমণ ঘটেছে সবগুলোই এসেছে উত্তর ইউরোপের সমতল ভূমিতে. কাজেই ইউক্রেনের ন্যাটোর অংশ হওয়া রাশিয়ার পক্ষে মানা কোনোভাবেই সম্ভব নয় আর এই কারণেই রাশিয়া ইতিমধ্যে ক্রিমিয়া দখল করে নিয়েছে মূলত ইউক্রিনকে নাটভুক্ত হওয়া থেকে দূরে রাখবে রাশিয়ায় যুদ্ধ শুরু করেছে।


 যুদ্ধ হলে গোটা দুনিয়া কোনো না কোনো ভাবে সেটার সঙ্গে যুক্ত হবেই। তাছাড়া ইউক্রেন তো তৃতীয় বিশ্বের কোন দেশ নয়. ইউরোপ আমেরিকা যে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াবে সেটা পুতিন জানতেন. কিন্তু তবুও প্রতিনিয়ত আক্রমণ করেছেন. এবং মোটামুটি সবাইকে চুপ থাকতে বাধ্য করেছেন শুরুর কয়েকটা দিন. ইউক্রেনকে সাহায্য করার জন্য কেউ সেনা পাঠানোর সাহস পায়নি কিন্তু পুতিনের এই খুঁটির জোরটা কোথায়? 



রাশিয়ার সবচেয়ে বড় জোর হল তার জ্বালানি. ইউক্রেন এর মধ্য দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে ইউরোপে যায় গ্যাস. এই গ্যাস সরবরাহ যদি রাশিয়া  বন্ধ করে দেয়. তাহলে ইউরোপের বহু বাড়িতে হিটার পর্যন্ত চলবে না. ইউরোপে ইউনিয়নের দেশগুলো যে চারটি দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করে. সেগুলো হলো রাশিয়া নরওয়ে , আলজেরিয়া ও কাতার. এর মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকেই আসে একচল্লিশ শতাংশ গ্যাস অর্থাৎ প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি. পশ্চিমারা যদি রাশিয়ার বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে তাহলে প্রতিদিন সরাসরি সেই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেবে. বিকল্প উৎস থেকে গ্যাস কিনতে ইউরোপের দেশগুলোকে খরচ করতে হবে চার গুনেরও বেশি টাকা. স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে নিষেধাজ্ঞা বা অবরোধকে পুতিন খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না. ইউক্রেন দখল তার কাছে এখন অনেকটাই ভাবমূর্তির লড়াই হয়ে গেছে.


 ইউক্রেনের ওপরে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ কতৃত্ব স্থাপন এখন সময়ের ব্যাপার. মোটা দাগে এখনো পর্যন্ত যেটা বোঝা যাচ্ছে যে ইউক্রেনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কি কে সরিয়ে কিউবের রাশিয়া পন্থী সরকার স্থাপন করতে পারে রাশিয়া । 


দেশটিতে রাশিয়ার উপস্থিতি পৃথিবীতে কোল্ড ওয়ারের দ্বিতীয় অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে. কিন্তু বিশ্ব এবার দুই শক্তির নয় নূন্যপক্ষে. ত্রি শক্তির বলয়ে পরিণত হতে যাচ্ছে. যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন. বর্তমানে চীন রাশিয়ার সম্পর্কের উষ্ণতার বিষয়টি খুবই পরিষ্কার. ইউক্রেন এর ইস্যুতে চীন কিন্তু রাষ্ট্রের পক্ষেই আছে। ইউক্রেনের রুশ হামলার পর হামলা বন্ধে চব্বিশ ফেব্রুয়ারী জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটাভুটিতে যে তিনটি দেশ ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বিরত ছিল তাদের মধ্যে চীন ছিল প্রধান, চীনের সঙ্গে ভোট প্রদানে বিরত ছিল ভারত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত । 


 রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ প্রাথমিকভাবে ইউরোপের সংকট মনে হলেও পুরো বিশ্বেই এর অর্থনৈতিক প্রভাব পড়বে. তৈরি হবে বিশ্ব রাজনীতির এক নতুন সমীকরনের. এই সমীকরণ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার কোনভাবেই বাদ যাবে না. রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকে ইতিমধ্যে সম্পর্কের গভীরতার জানান দিয়েছে ভারত. সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে কেনার মধ্য দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্প্রতি নতুন করে ঝালাই হয়েছে সম্পর্কটা. ভারত রাশিয়া থেকে অত্যাধুনিক মিসাইল সিস্টেম, এস ফোর হান্ড্রেড কিনেছে এইতো কিছুদিন আগে। অপরদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের মধ্যেই মস্কো সফরে গিয়েছিলেন. আফগানিস্তানের রাশিয়া এবং রুশ ফেডারেশনের সদস্যদের সম্পৃক্ততার কারণে এবং চীনের সঙ্গে উভয় দেশের সম্পর্কের কারণেই ইমরানের এই সফর বলে ধারণা করা হচ্ছে. আমেরিকা বা নেটোর দ্বারা রাশিয়া কোনোভাবে আক্রান্ত হলে চীনতো তাদের পাশে থাকবেই ইরান তুরস্কেরও পক্ষ বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবকাঠামোর এমন ব্যবহার পরবর্তীকালে রাশিয়া, চীন সহ বিরুধী দেশগুলোর কাছে বশ্যিক কাঠামোর আস্থা হারাবে। বাধ্য করবে তাদের বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করতে। যা বিশ্বায়নের উপর ফেলবে নেতিবাচক প্রভাব। ইতিমধ্যেই ডলার এবং ইউরোর বিকল্প হিসেবে চীনের মুদ্রায় ইয়নকে প্রতিষ্ঠা করার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চীন।



 রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার মাধ্যমে আরেকটা মজার ঘটনা ঘটেছে. পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে আমেরিকা খুব শান্তিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদেরকে প্রমাণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে. কিন্তু তিক্ত সত্য হলো যুদ্ধ চাই না শান্তি  চাই এসব কথা মার্কিনীদের মুখে একদম মানায় না. মানায় না অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর মুখেও. নিজ স্বার্থে তাঁরা যুদ্ধ করতে পিছপা হয় না কখনো. ইতিহাস তো তাই বলে. এখানে একটু মনে করিয়ে দিই. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাই মন্ডো ডকট্রিনের আওতায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে 84 টি  দেশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকার পরিবর্তন করেছে. বর্তমান সময়ের দৃষ্টান্তের মধ্যে রয়েছে লিবিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানের মতো দেশগুলো. জর্জ বুশ যখন ইরাক আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নিয়েই ফেলেছেন তখন ইংল্যান্ড, জার্মানি ও ফ্রান্স প্রথমদিকে এই সিদ্ধান্তকে সায় দেয় নি ।


 কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যখন জানালো যুদ্ধ পরবর্তী ইরাকে তেল সম্পদ ও কনস্ট্রাকশন কাজের ভাগ বাটোয়ারাই তাদের কোনো অংশ থাকবে না সঙ্গে সঙ্গে ইংল্যান্ড জার্মানির ফ্রান্স মঙ্গলেই চলে যায় আজ রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দলবদ্ধ হয়েছে. কিন্তু নিজেরা যখন গুলি করে আর বোমা মেরে নিরীহ মানুষ খুন করে তখন সেটার নাম দেওয়া হয় সন্ত্রাসবাদ. আবার রাশিয়াকেও ধোয়া তুলসী পাতা ভাবার কিন্তু কোনো কারণ নেই. বাসার আল আসাদ যে সিরিয়ায় হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছেন. সেই বাসারকে সাহায্য করেছিল রাশিয়াই. রুশ বাহিনী সিরিয়াল হাসপাতালেও বোমা নিক্ষেপ করেছে. কমিউনিজমের বিস্তার ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র, আফগানিস্তান ভিয়েতনামে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ লিখতে হয়েছিল. যুদ্ধের ভয়াবহতা কি? তা ইউরোপের জনগণ কত শতাব্দীর দুটি মহাযুদ্ধ থেকে ভালোভাবেই কাজ করতে পেরেছে. খেয়াল করলে বোঝা যাবে বিশ্বযুদ্ধগুলো মূলত ইউরোপ কেন্দ্রিক হয়েছিল. তাই ইউরোপের জন্য নিচ মহাদেশে যুদ্ধ. কখনোই কাম্য নয়. ইউরোপের মাটিতে শেষ যুদ্ধ হয়েছে উনিশশো বিরানব্বই চুরানব্বই সালে. সাবেক যুব স্লামিয়ার মাটিতে যা বলকাম যুদ্ধ বলে পরিচিত. এরপর দীর্ঘ সময় বিশ্বের নানা স্থানে যুদ্ধ হলেও ইউরোপে ঐক্য ও শান্তির একটা রাজনীতির প্রাধান্য পেয়েছে ইউক্রেন ইস্যুতে তাই ঠিক যতটা সরব পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ব কিন্তু তার ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা যায় বিশ্বের অন্যান্য সংঘাত কবলিত দেশগুলোতে ইউক্রেনের রুশ আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা ও জনমত গঠনে পশ্চিমা মিডিয়ায় যে সড়ক প্রচেষ্টা ঠিক ততটাই অনীহা দেখা গিয়েছে ইসরাইল যখন ফিডিসিনে আকর্ষণ চলেন ইয়েমেনের সৌদি হামলার বিরুদ্ধে কিংবা মার্কিন প্রশাসনের আফগান যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিশ্ব গণমাধ্যমও যেন এক জোগা। যেখানে ফুটে উঠেছে বিশ্ব ব্যবস্থার প্রাচ্য বনাম পাশ্চাত্যের একটা দ্বন্দ্ব। কিন্তু কেন? এই কেন উত্তর পাওয়া যায় সিবিএস নিউজের সিনিয়র ক্রসপন্ডেন চার্লিডি আগাছার একটা বক্তব্য থেকে। দিস প্রেজেন্টস আব্দুল you know like your g seen আলাদা মনে করে ইরাকি বা অজ্ঞান জনতার তুলনায় ইউরোপিয়ান কেবল আগাছাই নন পশ্চিমাদের নীতি দেখে মনে হচ্ছে তারা এই কমনই ধারণা করেন পশ্চিমা গণমাধ্যম গুলো পাশ্চাত্য ভাব ধারায় উদ্ভ এ ছাড়াও বর্ণবাদ নীতি বা হোয়াইট সুপ্রিমিসি এর একটি বড় ভূমিকা দেখা যাচ্ছে এখানে পশ্চিমাদের এ ধরনের আচরণের পেছনে রয়েছে তাদের শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ এবং বর্ণবাদী চিন্তা চেতনা পশ্চিমারা যতই বৈচিত্রের কথা বলুক এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে তাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে থেকে যাওয়া বর্ণবাদের আবারও প্রকাশ পেয়েছে ইউক্রেনের ডানপন্থী সংগঠনের উগ্র সদস্যরা গণমাধ্যমে মুক্তি যোদ্ধা হিসেবে প্রদর্শিত হচ্ছে.  



   ইউক্রেনের স্মরণার্থীরা যখন পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয়সহ তিন বছরের রেসিডেন্সি পারমিট পাচ্ছেন. একই সময় ভুমধ্য সাগরে কোস্টগার্ডের পুশব্যাক এর শিকার হয়ে ঠান্ডায় জমে মৃত্যুর মুখে পড়ে যাচ্ছেন শরণার্থীরা। দ্বিচারিতার এই ফিরিস্তি দিয়ে কখনোই শেষ হবার নয়   ইউক্রেনকে তো ম্যাটোতে যোগ দিতে দেবেনই না পুতিন।  পাশাপাশি পূর্ব ইউরোপ থেকে উনিশশো-সাতানব্বই সালের পর থেকে যেসব দেশ ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে সেসব দেশকে ন্যাটোর বাহিনী এবং সামরিক স্থাপনা অপসারণের দাবি জানিয়েছেন পুতিন । এমনকি রাশিয়ার সীমান্তের কাছে হামলা চালাতে সক্ষম এমন অস্ত্র মোতায়েন করা যাবে না বলে দাবি তুলেছেন তিনি । এর অর্থ ইউরোপ, পূর্ব ইউরোপ এবং বাল্টিক অঞ্চলে নেটোর কার্যক্রমে লাগাম টানতে হবে. রাশিয়ার জোর দিয়ে বলেছে কিএফ কে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে. আর রাশিয়ার এই দাবি কে মেনে নিতে পারে বলে মনে হচ্ছে না. কিন্তু বল এখনো রাশিয়ার কোর্টে. পুতিন যা চান সেটাই হবে সেখানে. কাজেই রক্তক্ষয়ী এই সংঘর্ষে আরো প্রাণ যাবে আরো সম্পদের ক্ষতি হবে দ্রব্যমূল্য বাড়বে. ভুক্তভোগী হবে গোটা পৃথিবীর মানুষ. যুদ্ধের হিংস্রতা থেকে এত সহজে আমাদের মুক্তি নেই. 

  

 





 

মন্তব্যসমূহ

Blog Posts

মানসিকতার কয় টা দিক ? Personalities theory কী ?

     আপনি মানুষের সামনে খুব হাসিখুশি থাকেন বলেই মানুষ আপনাকে ভেবে নিল. আহ মানুষটা কি ভিল দরিয়া? মানুষটা খুব মিশুক. এক্সট্রোভার্ট।   কিন্তু আপনি আসলে ভেতরে ভেতরে উপলব্ধি করেন মানুষ আপনাকে যা ভাবে তা আপনি নন মানুষের সামনে হয়তো কোনোরকমে মানিয়ে নেন।  কিন্তু এত হাঙ্গামা আসলে আপনার পছন্দ নয় । আপনি আসলে নিজের ভুবনে থাকতেই বেশি পছন্দ করেন নিজস্ব সার্কেলে । কিন্তু এমন কিন্তু এমনটা কেন? কিছু মানুষের ভেতরে দৈত সত্তা খুব বেশি কাজ করে. মনের ভেতর আর বাইরের উপস্থাপনার একটা দ্বন্দ্ব চলতেই থাকে. মানুষ আপনাকে যতটা introvert ভাবে মনে করে. কি ভাব? আপনি তেমন নাও হতে পারেন । আপনিও জোৎস্ই জায়গা পেলে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে এক্সপ্রেস করতে পারেন । এই যে দইতো একটা বৈচিত্র নিয়ে মানুষ বেঁচে আছে এটাকে তাহলে কি বলা যাবে? এই ধরণের মানুষগুলো আসলে এক্সট্রোভার্ট  আবার পুরোপুরি ইন্ট্রোভার্ট ও না ।  তারা মাঝামাঝি একটা অবস্থানে থাকে. এই মানুষগুলোকে বলা হয় হ্যান্ডবিভার. মজার ব্যাপার হল প্রচলিত একটা ধারণা আছে যে এক্সট্রোভার্টরা সেলস কমিউনিকেশানে খুব ভালো হয়. কিন্তু গবেষণায়...

এরিয়া ফিফটি one কি ?

এরিয়া ফিফটি ওয়ান  এটা এক অচেনা জগৎ. এখানে না আছে কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক, না আছে কোনো সুইট সাইন. নেই পিচ ছাড়া রাস্তা বা প্রাণের খুব একটা স্পন্দন। এমনকি বাইরের বিশ্বের সংস্কৃতি এবং সমাজের সামান্যতম বিস্তরণও নেই এখানে। এই নিরীহ নির্মম গোপন রহস্য আসলে কি তা জানার সুযোগ হয়েছে বলা চলে খুবই কম । কখনো কখনো বলা হয় এটা এলিয়ান গবেষণাগার. ইউএফও বা আন আইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্স নিয়েও নাকি প্রচুর গবেষণা করা হয়েছে. অনেকে ধারণা করেন যে একবারই স্থানে ঢুকলে আর বের হওয়া যায় না. বাইরের মানুষের কাছে একটা মিথ হয়ে রয়ে গেছে এই অঞ্চল. অন্তত এখনো পর্যন্ত. বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে গোপন ও সবচেয়ে রহস্যময় এলাকা এটি. নাম এরিয়া ফিফটি ওয়ান. শুরু থেকেই গোপনীয়তার দুর্ভেদ্য চাদরে মোড়ানো বলে এরিয়া ফিফটি ওয়ান নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হয়েছে দিনকে দিন । জমাট বাঁধা এই রহস্য থেকেই কালক্রমে জন্ম নিয়েছে বেশ কিছু কন্সপিরেসি থিওরি ।  আমেরিকার নেভা স্টেটের দক্ষিণে লাস ভেগাস থেকে একশো পঞ্চাশ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে পাহাড় গেরা মরুভূমির মধ্যে ঊনত্রিশ লক্ষ একর জায়গা জুড়ে আছে কুখ্যাত এবং বিদ্রুপজনক...

শিক্ষা শ্রম কি ? কিভাবে বের হতে পারা যায় এই অসুস্থ জগৎ থেকে ?

     এইতো কয়েকদিন আগের কথা. বিশ্বসেরা all rounder সাকিব আল হাসান সাংবাদিক উৎপল সুটের কাছে একটা ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন. পঞ্চপাণ্ডব  সহ আরো কিছু বিষয় সোজাসাপ্টা মন্তব্যের কারণে সেই সাক্ষাৎকার নিয়ে বেশ বিতর্ক হলো কিন্তু ক্রিকেট ও আলোচনা বা বিতর্কিত আলাপের বাইরেও সাকিব সেই সাক্ষাৎকারে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বলেছিলেন যেটা নিয়ে বিন্দুমাত্র আলোচনা হয়নি । পরিবার আমেরিকাতেই স্থায়ী হবে এমন আভাস দিয়ে সাকিব বলেছিলেন বাংলাদেশে থাকার সময় স্কুলে যাওয়ার আগে আমার বড় মেয়ে অ্যালাইনা ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন কাঁদতো. অথচ আমেরিকায় এক ডাক দেওয়ার আগেই নিজে উঠে চোখ বন্ধ করে নিজে ব্রাশ করে স্কুলের জন্য রেডি হয়ে যায়. এর থেকে ভালো আমার জন্য আর কি হতে পারে?  সাকিব কেন নিজেকে একমাত্র পাণ্ডব বলে দাবি করেছেন সাকিবের বক্তব্যে অন্যান্য সিনিয়র প্লেয়ারদের অসম্মান করা হয়েছে কিনা এসবের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু কিন্তু এই কয়েকটা লাইনে লুকিয়ে আছে । স্কুল জায়গাটা কেন পাঁচ থেকে ছয় বছর বয়সের একটা বাচ্চা মেয়ের কাছে বিভীষিকার নাম হয়ে উঠবে.  এই গল্পটা শুধু এলাইনার নয়. এ...

ন্যানো টেকনোলজি কিভাবে কাজ করে ?

  যদি বলি আপনার চোখ দেখতে পারে না এমন গভীর ও প্রায় অনাবিষ্কৃত একটা পৃথিবী আছে. হয়তো বলতে পারেন যে মহাবিশ্বে কত গ্রহই তো আছে? সব খোঁজ কি আমরা পেয়েছি? কিন্তু যদি বলি আমাদের এই পৃথিবীর ভেতরে আরো একটি জগত আছে এবং যে জগৎ ছড়িয়ে আছে আমাদের গোটা বিশ্ব জুড়ে. এইবার হয়তো নড়েচড়ে বসবেন. হ্যাঁ আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে এমন এক রাজ্য যে আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না. এটাকে বলা হয় অণুবীক্ষণিক বিশ্ব. এই অণুবীক্ষণই বিশ্ব প্রচন্ড আকর্ষণীয় ও চমকে দেওয়ার মতো. কি কি ঘটছে এখানে তা আমার আপনার কল্পনারও বাইরে. এটা যেন কোনো ভিন গ্রহ বাসীদের রাজ্য. সম্ভাবনার দুয়ার খুলে রাখা আছে এই অণুবীক্ষণিক বা nano বিশ্বে.  ন্যানো কি ন্যানো হলো পরিমাপের একক। এক মিটারের একশো কোটি ভাগের এক ভাগ হচ্ছে এক ন্যানো। আর ন্যানো টেকনোলজি হলো বিজ্ঞানের এই অতি ক্ষুদ্র স্তরে একটা কিছু তৈরী করা আসলে শুধু তৈরি করা না. ন্যানোমিটার স্কেলে পরিবর্তন, পরিবর্তন, ধ্বংস বা সৃষ্টি সম্পর্কিত টেকনোলজিকেই ন্যানো টেকনোলজি বলে. অর্থাৎ ন্যানোমিটার স্কেলে পরিমিত যেকোনো বিষয়ে বহুমাত্রিক টেকনোলজিকে ন্যানো প্রযুক্তি বা ন্যানো টেকনোলজি বলা যে...

স্কিল না সার্টিফিকেট? সার্টিফিকেটের দিন কি তাহলে শেষ হয়ে এল ? দেশে এত বেকার কেন ?

  একদিকে বেকারের সংখ্যা বাড়ছে. অন্যদিকে চাকরিদাতারা বলছেন যোগ্য লোকের অভাব. আসলে বিষয়টা কি?  বেকার সমস্যা. বিশাল জনগোষ্ঠী, দেশ, বাংলাদেশের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুতর একটা সমস্যা. সমস্যাটা আরো গুরুতর যখন এই বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষিতের সংখ্যাই বেশি. বিআইডিএস এর এক জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বেকারত্বের হার চৌত্রিশ শতাংশ এবং স্নাতক পর্যায়ে এই হার সাইত্রিশ শতাংশ যুক্ত রাজ্যের প্রভাবশালী সময় কিনা ইকোনমিস্টের কলামেও বলা হয়েছে বর্তমানে বাংলাদেশের সাতচল্লিশ শতাংশ স্নাতকই বেকার. অর্থাৎ প্রতিবছর যদি বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর সহ উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে সারে তিন লাখ মানুষও বের হয় তবে তাদের প্রায় অর্ধেকই থেকে যাবে কর্মহীন।   কেন এত এত বিএসসি, এমএসসি, বিবিএ, এমবিএ, বিএ, এমএস সার্টিফিকেটধারী উচ্চশিক্ষিত তরুণ তরুণী দিন শেষে বেকার থেকে যাচ্ছে হ্যাঁ এটা সত্য যে চাকরি প্রত্যাশীদের বিপরীতে যথেষ্ট কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আমাদের দেশে নেই. কিন্তু আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষিতদের অনেকেই যখন বেকার তখন প্...

চীন কে ঠেকাতে আমেরিকার মহা পরিকল্পনা ? ইন্দো প্যাসিফিক ইকোনমিক ফেমোওয়ার্ক কি ?

  ইন্দো প্যাসিফিক ইকোনমিক ফেমোওয়ার্ক ফর পোস্ট প্রায়োরিটি বা সংক্ষেপে আইপিডিএফ অনেক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে এটিই হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বহুপাক্ষিক অর্থনৈতিক উদ্যোগ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পলিটিক্যাল ইকোনমিক বাজারে এই ধারণাটা খুব জোরালোভাবে আলোচিত হচ্ছে ।  জাপানে ইন্দো প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেম ওয়ার্ক নামে নতুন এই অর্থনৈতিক উয্যোগের ঘোষণার সময় জো বাইডেন খুব জোরে স্বরেই বললেন আমরা এর মাধ্যমে একুশ শতকের অর্থনীতির নতুন ধারা রচনা করতে যাচ্ছি ।  প্রশ্ন হচ্ছে ইন্দো প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেম ওয়ার্ক  বিষয়টা কি?  আগে কিছু বিষয় সম্পর্কে একটু ধারণা নেওয়া প্রয়োজন এটা খুব নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় এই অর্থনৈতিক উদ্যোগের কর্ণধার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র । তাই পুরো বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদের ইন্ডো প্যাসিফিক অঞ্চল এবং এই অঞ্চলকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব বুঝতে হবে.  প্রথমত বোঝা দরকার বৈশিক রাজনীতির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবটা কি? যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্ব রাজনীতিতে নিজেকে সুপার পাওয়ার হিসেবে দেখতে চায়.  মার্কিনীরা সবসময় চেষ্টা করে তার চেয়ে শক্তিশালী দেশের উত্থ...

দেযা ভু এফেক্ট কি ?

আচ্ছা এমনটা হয়েছে যে একদম নতুন কোনো জায়গায় প্রবল বৃষ্টিতে একটা ছাউনিতে আপনি আশ্রয় নিয়েছেন অথবা ধরুন কোথাও ট্যুরে গিয়ে আপনি আয়েশ করে বসে চা হাতে নিয়ে বই পড়ছেন । হঠাৎ আপনার মনে হলো এই জায়গায় আপনি আগেও ঠিক একইভাবে আটকে ছিলেন বৃষ্টিতে বা একই জায়গায় বসে চা হাতে বই পড়ছিলেন । অথচ বাস্তবে আপনি আগে কখনো এমন কিছু করেছেন বলে কিছুতেই মনে পড়ছে না কিন্তু ঘটনাগুলো এতটাই পরিচিত যে আপনি প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন মনে করার জন্য। হ্যাঁ এটাই দেযা ভু এফেক্ট ।  দেযা ভু এফেক্ট আমাদের সবার সাথেই কম বেশি হরহামেশাই ঘটে থাকে । ফরাসি এই শব্দের প্রথম প্রবর্তন করেন দার্শনিক এমএল বোরাক । যার অর্থ ইতিপূর্বে ঘটে গিয়েছে । এটি এমন একটি অনুভূতি যা থেকে মনে হতে পারে বর্তমানে ঘটতে থাকা কোন ঘটনা এর আগেও একই ভাবে অতীতে ঘটেছে। গবেষকদের মতে মোট জনসংখ্যার প্রায় সত্তর শতাংশের সাথে দেযা ভু এফেক্ট নিয়মিত ঘটে। অন্যান্য বয়সের তুলনায় পনেরো থেকে পঁচিশ বছর বয়সের মানুষের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে সবচেয়ে বেশি। না, এটি কোন রোগ নয় । একদম সুস্থ মানুষের সাথেও নিয়মিত এমন অভিজ্ঞতা ঘটতে পারে যারা অনেক বেশি ভ্রমণ করেন...

চীন কিভাবে সুপার পাওয়ার হয়ে উঠল ? চীন কিভাবে বিশ্ব অর্থনীতির জায়ান্ট হল ?

   সালটা উনিশশো আটানব্বই. বিশ্ব বানিজ্য সংস্থার সদস্য পদের জন্য আবেদন করে চীন।  তাদের জন্য বিষয়টা ঠিক এতটা সহজ ছিল না।  কারণ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ তখন চীনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়. এর অবশ্য কারণও ছিল. চীনা কোম্পানিগুলো বিখ্যাত ব্র্যান্ডের রিপ্লিকা ছাড়া আর কিছুই নয় বা নকলপূর্ণ বানায় এই বদনামে ছেয়ে গেছে তখন চারিদিক. চীন সরকার এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয় না.  সেই সময় চীনের পক্ষে দাঁড়িয়ে সেই দেশগুলোর রাগ ভাঙিয়েছিলেন তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিটন কিন্তু ক্লিটন যদি জানতেন বছর বিশেকের মধ্যেই বৈশিক অর্থনীতিতে তার দেশকে পেছনে ফেলে সুপার জায়ান্ট হবার দূরে এগিয়ে যাবে চীন। এই কাজটা হয়তো তিনি করতেন না কখনো. সেই সময় আমেরিকার অর্থনীতি ছিল নয় ট্রিলিয়ন ডলারের. আর চীনের অর্থনীতির মূল্যবান ছিল মাত্র এক ট্রিলিয়ন ডলার. নয় গুণ পিছিয়ে থাকা একটা দেশের সঙ্গে কোন প্রতিযোগিতাই নেই. এমনটাই হয়তো ভেবেছিলেন ক্লিটন। কিন্তু সেটা যে কত বড় ভুল ধারণা ছিল. সেটা এখন আমেরিকানরা জানে হাড়ে হাড়ে. ছোট্ট একটা ডেটা দিয়ে শুরু করা যাক. দু হাজার বিশ সা...

বাংলাদেশ কি তবে শ্রীলংকা হতে যাচ্ছে ? বাংলাদেশ কি তাহলে দেউলিয়া হবার পথে ?

শ্রীলংকার সরকার অবশেষে জানিয়ে দিয়েছে বিপুল পরিমান বিদেশি ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা তাদের নেই অর্থাৎ নিজেদের দেউলিয়া হিসাবে ঘোষণা করতে বাধ্য হলো দেশটি । এটা অবশ্য বোঝাই যাচ্ছিলো গত কয়েকদিনের প্রেক্ষাপট দেখে ধারণা করা যাচ্ছিলো দেউলিয়া ঘোষণা করা ছাড়া অন্য কোনো রাস্তা খোলা নেই শ্রীলংকার সামনে । তবে শ্রীলঙ্কার এই দুরাবস্থায় বাংলাদেশের নাগরিকদের অনেকেই বেশ চিন্তিত। বিপুল পরিমান বিদেশি ঋণের ভারে জর্জরিত হওয়াটা শ্রীলংকার আজকের অবস্থার একটা বড়ো কারণ। অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকান্ড চালাতে বাংলাদেশকেও প্রচুর বৈদেশিক ঋণ নিতে হচ্ছে. এখানে দুর্নীতি আছে আছে মুদ্রাস্ফীতি , জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে. আর তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক আছে. আজ থেকে কয়েক বছর পর বাংলাদেশের অবস্থাও শ্রীলংকার মতো হবে না তো? তার আগে আমরা ব্যাখ্যা করবো শ্রীলঙ্কার বর্তমান দুরাবস্থার কারণগুলো নিয়ে. জটিল কোনো রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক আলোচনা নয়. খুব সাদামাটা ভাবে আমরা বোঝানোর চেষ্টা করবো পুরো বিষয়টি. তাহলে শুরু করা যাক.  শ্রীলঙ্কায় গত কিছুদিন ধরেই জ্বালানি তেলের সংকট চলছে দারুণভাবে. রান্নার গ্যাসের অভাব. ভ...

মিনিমালিজম কি ? কিভাবে মিনিমালিস্ট হওয়া যায় ?

মিনিমামলিজম এই ধারণাটি বিগত কয়েক বছরে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং এর যথেষ্ট কারণও আছে. এই পুরো ব্যাপারটা কি? সেটাকে সঙ্গায়িত করা যায় এভাবে যে,  মিনিমালিজম হচ্ছে যা আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সেগুলোকে ধারণ করা এবং বাকি সব কিছু যা আমাদের দৃষ্টিকে অন্যদিকে সরিয়ে নেয় সেগুলোকে ইচ্ছাকৃতভাবে ত্যাগ করা।   অর্থাৎ কোন কোন বিষয়ে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কোন জিনিসগুলোকে আমাদের কাছে সবচেয়ে মূল্যবান সেই সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা থাকা এবং বাকি সব ত্যাগ  করে দেয়. সেগুলো নিয়েই জীবন ধারণ করা. কিন্তু এমন সংজ্ঞায়ন সত্ত্বেও minimalism কোন ধরাবাধা জীবন ব্যবস্থা নয় বা মিনিমালিস্ট হতে হলে কোন নির্দিষ্ট মানদণ্ড মেনে চলতে হবে এরকমটিও কিন্তু নয়. মিনিমালিস্ট লাইফ স্টাইল এমন একটি বিষয় যা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য স্বতন্ত্র। এক্ষেত্রে মূল বিষয়টি হচ্ছে সত্যিকার অর্থে কোন কোন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সেই সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা নিয়ে সেই অনুযায়ী জীবন ধারণ করা. প্রিয় দর্শক চলুন দেখি মিনিমালিজম কিভাবে আপনার জীবনধারা বদলে দিতে পারে।  মিনিমালিস্ট জীবন অবশ...