উনিশশো একানব্বই সাল. সোভিয়েত ইউনিয়নে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মিখাইল গর্ভাচেবের পরিবর্তিত নীতির কারণে স্নায়ু যুদ্ধের শেষ প্রান্তে এসে ভেঙে গেল সোভিয়েত সাম্রাজ্য. পনেরোটি আলাদা আলাদা স্বাধীন দেশের জন্ম হলো সোভিয়েত ভেঙে । এর আগের বছরই বার্লিন দেয়ালের পতন হয়েছে । কমিউনিস্ট ভাবধারার পূর্ব জার্মানি এসে পুঁজিবাদী ধারণার পশ্চিম জার্মানির সাথে একাত্ম হয়েছে। পরের বছর রুশ সাম্রাজ্যের পতন ঘটলো আর সেই সাথে শেষ হলো স্নায়ু যুদ্ধ। পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা যখন হুইস্কির গ্লাসে চেয়ারস বলে চুমুক দিচ্ছেন. সেন পিটাস বার্গে বসে এক তরুণ কেজিবি এজেন্ট তখন স্তব্ধ হয়ে বসে আছে. কে জানে সেই এজেন্ট হয়তো মনে মনে সেদিন শপথ করেছিলেন. যেভাবেই হোক একদিন সোভিয়েত ইউনিয়নকে আবার তিনি এক করবেন. আমরা জানি না এমন কোন প্রতিজ্ঞা সেদিন করা হয়েছিল কিনা. কিন্তু হাজার বাইশ সালের মার্চ মাসে দাঁড়িয়ে আপনি যখন শুনবেন সেই কেজিবি এজেন্টের নাম ছিল ভালাদিমের পুতিন তখন মনের মধ্যে এমন ধারণার জন্ম পাওয়াটাই কিন্তু খুব স্বাভাবিক।
এ তো গেল ফিকশনের কথাবার্তা. এবার আসা যাক যা ঘটেছে ঘটছে এবং যা ঘটতে পারে সেসব নিয়ে বিস্তারিত আলাপে. ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনারা আক্রমণ করেছে স্থল এবং আকাশ পথে যুদ্ধ হচ্ছে. ইউক্রেনের বেশ কিছু এলাকা রাশিয়ার সেনাদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে এবং বিস্ময়কর ভাবে. ইউক্রেন এখনো যুদ্ধে টিকে আছে এবং বেশ ভালোভাবে। পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন আদায় সক্ষম হয়েছে ইউক্রেন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নানা রকমের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রাশিয়াকে কাবু করতে চাইছে। এসব তো সবাই জানেন. কিন্তু কেন হঠাৎ বেজে উঠল যুদ্ধের দামামা? এই যুদ্ধের পটভূমিই বা কি? পুতিন কি ইউক্রেন দখল করেই থামবেন নাকি ?
হিটলারের মত তিনিও আগ্রাসী নীতিতে হাত বাড়াবেন ইউরোপের বাকি অংশ কব্জা করার ব্যাপারে. চলুন গোলক ধাঁধার এই রাজ্যে হারানো যাক. বেশ অনেকদিন ধরেই জল্পনা-কল্পনা ছিল রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের আশঙ্কা নিয়ে. এ বছরের শুরুতেই রাশিয়া এক লাখের বেশি সৈন্য ইউক্রেনের উত্তর ও পূর্ব সীমানায় মোতায়েন করেছিল. আর তখনই যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট করে বলেছিল রাশিয়া হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে. তবে সেই হামলা ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র কার্যকর কোনো কূটনৈতিক উদ্যোগ নেয়নি. যুক্তরাষ্ট্রের মতো একইভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন শঙ্কা প্রকাশ করলে ইউক্রেইনকে বাঁচানোর কোনো পদক্ষেপ তারা নেয় নি. যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল চোদ্দই ফেব্রুয়ারী রাশিয়ায় ইউক্রিন আক্রমণ করতে পারে। কিন্তু সেদিন কিছুই ঘটেনি বরং সেনা মোতায়েন করা কিছু জায়গা থেকে রাশিয়া তাদের সেনাদের সরিয়ে নিয়ে ছিল। আমেরিকার গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়ে তখন একজোট বেশ হাসাহাসিও হয়ে ছিল। কিন্তু সব হিসাব নিকাশ পাল্টে গেল চব্বিশ ফেব্রুয়ারী. পুতিন এর নির্দেশে ভোরবেলা রুশবাহিনী ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করল. রুশ বিমান থেকে ইউক্রেনের সামরিক লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত হানা শুরু হলো।
অন্যদিকে রুশ স্থলবাহিনীও উত্তর ও দক্ষিণের সীমানা অতিক্রম করে ঢুকে পড়ল ইউক্রেনে. ইউক্রেনের উপর হামলার জের ধরে ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপি ইউনিয়ন, জাপান সহ একাধিক দেশ রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে. এসব নিষেধাজ্ঞার বেশিরভাগই অর্থনীতির।
তারা রাশিয়ার উপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের মাধ্যমে দেশটিকে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন. সব মিলিয়ে যে বাস্তবতা দাঁড়িয়েছে তা হল প্রায় এক চেটিয়া ভাবে পুনরুদ্ধিত রাশিয়া এবং একটি ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষামূলক পশ্চিমের মধ্যে ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বেঁধে গেছে. ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের এই প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে. দু হাজার চোদ্দ সালে রাশিয়া ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়া দখল করে নেয়. এর মাধ্যমেই ইউক্রেন সংকট শুরু. তবে শুরুর গল্পটা জানতে হলে আরো অতীতে ঢু মারতে হবে. ক্রিমিয়া দখলেরও কিন্তু একটি গোড়ার ইতিহাস আছে. একটা সময় ইউক্রেন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের অংশ ছিল. প্রায় দুশো বছর ধরে ক্রিমিয়া উপদ্বীপের মালিকানা ছিল রাশিয়ার হাতে.
উনিশশো চুয়ান্ন সালে তৎকালীন সোভিয়াত নেতা নিকিতা ক্রিমিয়া মালিকানা ইউক্রেনের হাতে হস্তান্তর করেন. তখন তিনি ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারেননি যে কয়েক দশকের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে. ইউক্রেন স্বাধীন হওয়ার পর পূর্ব ইউরোপের আরো কিছু কমিউনিস্ট দেশ এবং সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের মতো ইউক্রেনেও দুটি রাজনৈতিক ধারা বেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে. একটি অংশ চায় পশ্চিম ইউরোপের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে. ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিতে এবং নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য নেটো সামরিক জোটের সদস্য হতে. কিন্তু অপর অংশ. রুশ প্রভাব বলয় থাকার ভীষণ পক্ষপাতী. কারণ ইউক্রেনের জনসংখ্যার বিরাট একটা অংশ রুশ ভাষাভাষি. দু হাজার চোদ্দ সালে ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টোরিয়ানো কোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন বিক্ষোভের মুখে. এরপর তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়। প্রেসিডেন্ট ভিক্টোরিয়ানো কোভিচ দুই নৌকায় পা দিয়ে চলতে চেয়েছিলেন. তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে মাখামাখি করছিলেন. কিন্তু আবার মস্কোকেও ভক্তি, শ্রদ্ধা দেখিয়ে চলছিলেন. তার পতনের পর যারা ক্ষমতায় আসে এমন কিছু পদক্ষেপ নেয় পুতিনকে ক্ষুব্ধ করে. ইউক্রেনের ভেতরে যে রুশ অধ্যুষিত অঞ্চল সেখানে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হলে মস্কো তাদের সমর্থন দেয়. এই বিদ্রোহীদের সমর্থনে এরপর রুশ সৈন্যরা হস্তক্ষেপ করে. এক পর্যায়ে ক্রিমিয়া অঞ্চল দখল করে সেটিকে নিজেদের দেশের অংশ বলে ঘোষণা করে রাশিয়া.
রাশিয়া একটা বিরাট দেশ. বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ. এগারোটি টাইম zone জুড়ে যার বিস্তৃতি. কিন্তু দেশটির জনসংখ্যা মাত্র চোদ্দ কোটি চল্লিশ লাখ. নাইজেরিয়া বা পাকিস্তানের চেয়েও অনেক কম. এত বড় একটি দেশের ক্রিমিয়া দখল করে নিজের সীমানাভুক্ত করার কি খুব দরকার ছিল? এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে. রাশিয়া যত বড় দেশই হোক তাদের একটাই সমস্যা. সারা বছর সচল রাখা যায় এমন উষ্ণ পানির গুরুত্বপূর্ণ বন্দর তাদের প্রায় নেই বললেই চলে. ক্রিমিয়া সেবাস্কপারে রাশিয়া যে নৌকাটি সেটি কৌশলগত কারণে তাই রাশিয়ার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ. বালটিক সাগরে রাশিয়ার ঢোকার পথ হচ্ছে এই বন্দর. সেটি হাতছাড়া হতে দিতে তারা কোনোভাবেই রাজি হয়নি. কাজেই ইউক্রেন যে ন্যাটোর সদস্য হবে সেটা রাশিয়া কোনোভাবেই মানবে না. রাশিয়ার আপত্তি থাকা সত্ত্বেও ইউক্রেনকে নেটো ভুক্ত করার প্রচেষ্টা চালানো হয়. আর তখনই বিড়ম্বনা থেকে বিরোধের সূচনা হয় ইউক্রেন কে কেন রাশিয়া নিজেদের কুক্ষিগত করে রাখতে চায় এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে অনেকগুলো কারণ সামনে আসবে. সেখানে ভুরাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সামরিক. অনেক কারণেই পাওয়া যাবে.
প্রথমত খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ ইউক্রেন. তাছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম কৃষি অঞ্চলও ছিল এই ইউক্রেন। দ্বিতীয়ত ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ছাড়াও পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার পর সবচেয়ে বড় দেশ হিসাবে ইউক্রেন রাশিয়ার ভৌগোলিক নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর আর তৃতীয়ত রুশ জাতির অভিজ্ঞতা বলে পূর্বে রাশিয়ার উপর যতবার বিদেশিদের আক্রমণ ঘটেছে সবগুলোই এসেছে উত্তর ইউরোপের সমতল ভূমিতে. কাজেই ইউক্রেনের ন্যাটোর অংশ হওয়া রাশিয়ার পক্ষে মানা কোনোভাবেই সম্ভব নয় আর এই কারণেই রাশিয়া ইতিমধ্যে ক্রিমিয়া দখল করে নিয়েছে মূলত ইউক্রিনকে নাটভুক্ত হওয়া থেকে দূরে রাখবে রাশিয়ায় যুদ্ধ শুরু করেছে।
যুদ্ধ হলে গোটা দুনিয়া কোনো না কোনো ভাবে সেটার সঙ্গে যুক্ত হবেই। তাছাড়া ইউক্রেন তো তৃতীয় বিশ্বের কোন দেশ নয়. ইউরোপ আমেরিকা যে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াবে সেটা পুতিন জানতেন. কিন্তু তবুও প্রতিনিয়ত আক্রমণ করেছেন. এবং মোটামুটি সবাইকে চুপ থাকতে বাধ্য করেছেন শুরুর কয়েকটা দিন. ইউক্রেনকে সাহায্য করার জন্য কেউ সেনা পাঠানোর সাহস পায়নি কিন্তু পুতিনের এই খুঁটির জোরটা কোথায়?
রাশিয়ার সবচেয়ে বড় জোর হল তার জ্বালানি. ইউক্রেন এর মধ্য দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে ইউরোপে যায় গ্যাস. এই গ্যাস সরবরাহ যদি রাশিয়া বন্ধ করে দেয়. তাহলে ইউরোপের বহু বাড়িতে হিটার পর্যন্ত চলবে না. ইউরোপে ইউনিয়নের দেশগুলো যে চারটি দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করে. সেগুলো হলো রাশিয়া নরওয়ে , আলজেরিয়া ও কাতার. এর মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকেই আসে একচল্লিশ শতাংশ গ্যাস অর্থাৎ প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি. পশ্চিমারা যদি রাশিয়ার বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে তাহলে প্রতিদিন সরাসরি সেই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেবে. বিকল্প উৎস থেকে গ্যাস কিনতে ইউরোপের দেশগুলোকে খরচ করতে হবে চার গুনেরও বেশি টাকা. স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে নিষেধাজ্ঞা বা অবরোধকে পুতিন খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না. ইউক্রেন দখল তার কাছে এখন অনেকটাই ভাবমূর্তির লড়াই হয়ে গেছে.
ইউক্রেনের ওপরে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ কতৃত্ব স্থাপন এখন সময়ের ব্যাপার. মোটা দাগে এখনো পর্যন্ত যেটা বোঝা যাচ্ছে যে ইউক্রেনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কি কে সরিয়ে কিউবের রাশিয়া পন্থী সরকার স্থাপন করতে পারে রাশিয়া ।
দেশটিতে রাশিয়ার উপস্থিতি পৃথিবীতে কোল্ড ওয়ারের দ্বিতীয় অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে. কিন্তু বিশ্ব এবার দুই শক্তির নয় নূন্যপক্ষে. ত্রি শক্তির বলয়ে পরিণত হতে যাচ্ছে. যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন. বর্তমানে চীন রাশিয়ার সম্পর্কের উষ্ণতার বিষয়টি খুবই পরিষ্কার. ইউক্রেন এর ইস্যুতে চীন কিন্তু রাষ্ট্রের পক্ষেই আছে। ইউক্রেনের রুশ হামলার পর হামলা বন্ধে চব্বিশ ফেব্রুয়ারী জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটাভুটিতে যে তিনটি দেশ ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বিরত ছিল তাদের মধ্যে চীন ছিল প্রধান, চীনের সঙ্গে ভোট প্রদানে বিরত ছিল ভারত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ।
রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ প্রাথমিকভাবে ইউরোপের সংকট মনে হলেও পুরো বিশ্বেই এর অর্থনৈতিক প্রভাব পড়বে. তৈরি হবে বিশ্ব রাজনীতির এক নতুন সমীকরনের. এই সমীকরণ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার কোনভাবেই বাদ যাবে না. রাশিয়ার বিপক্ষে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকে ইতিমধ্যে সম্পর্কের গভীরতার জানান দিয়েছে ভারত. সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে কেনার মধ্য দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্প্রতি নতুন করে ঝালাই হয়েছে সম্পর্কটা. ভারত রাশিয়া থেকে অত্যাধুনিক মিসাইল সিস্টেম, এস ফোর হান্ড্রেড কিনেছে এইতো কিছুদিন আগে। অপরদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের মধ্যেই মস্কো সফরে গিয়েছিলেন. আফগানিস্তানের রাশিয়া এবং রুশ ফেডারেশনের সদস্যদের সম্পৃক্ততার কারণে এবং চীনের সঙ্গে উভয় দেশের সম্পর্কের কারণেই ইমরানের এই সফর বলে ধারণা করা হচ্ছে. আমেরিকা বা নেটোর দ্বারা রাশিয়া কোনোভাবে আক্রান্ত হলে চীনতো তাদের পাশে থাকবেই ইরান তুরস্কেরও পক্ষ বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবকাঠামোর এমন ব্যবহার পরবর্তীকালে রাশিয়া, চীন সহ বিরুধী দেশগুলোর কাছে বশ্যিক কাঠামোর আস্থা হারাবে। বাধ্য করবে তাদের বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করতে। যা বিশ্বায়নের উপর ফেলবে নেতিবাচক প্রভাব। ইতিমধ্যেই ডলার এবং ইউরোর বিকল্প হিসেবে চীনের মুদ্রায় ইয়নকে প্রতিষ্ঠা করার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চীন।
রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার মাধ্যমে আরেকটা মজার ঘটনা ঘটেছে. পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে আমেরিকা খুব শান্তিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদেরকে প্রমাণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে. কিন্তু তিক্ত সত্য হলো যুদ্ধ চাই না শান্তি চাই এসব কথা মার্কিনীদের মুখে একদম মানায় না. মানায় না অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর মুখেও. নিজ স্বার্থে তাঁরা যুদ্ধ করতে পিছপা হয় না কখনো. ইতিহাস তো তাই বলে. এখানে একটু মনে করিয়ে দিই. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একাই মন্ডো ডকট্রিনের আওতায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে 84 টি দেশে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকার পরিবর্তন করেছে. বর্তমান সময়ের দৃষ্টান্তের মধ্যে রয়েছে লিবিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানের মতো দেশগুলো. জর্জ বুশ যখন ইরাক আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নিয়েই ফেলেছেন তখন ইংল্যান্ড, জার্মানি ও ফ্রান্স প্রথমদিকে এই সিদ্ধান্তকে সায় দেয় নি ।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যখন জানালো যুদ্ধ পরবর্তী ইরাকে তেল সম্পদ ও কনস্ট্রাকশন কাজের ভাগ বাটোয়ারাই তাদের কোনো অংশ থাকবে না সঙ্গে সঙ্গে ইংল্যান্ড জার্মানির ফ্রান্স মঙ্গলেই চলে যায় আজ রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দলবদ্ধ হয়েছে. কিন্তু নিজেরা যখন গুলি করে আর বোমা মেরে নিরীহ মানুষ খুন করে তখন সেটার নাম দেওয়া হয় সন্ত্রাসবাদ. আবার রাশিয়াকেও ধোয়া তুলসী পাতা ভাবার কিন্তু কোনো কারণ নেই. বাসার আল আসাদ যে সিরিয়ায় হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছেন. সেই বাসারকে সাহায্য করেছিল রাশিয়াই. রুশ বাহিনী সিরিয়াল হাসপাতালেও বোমা নিক্ষেপ করেছে. কমিউনিজমের বিস্তার ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র, আফগানিস্তান ভিয়েতনামে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ লিখতে হয়েছিল. যুদ্ধের ভয়াবহতা কি? তা ইউরোপের জনগণ কত শতাব্দীর দুটি মহাযুদ্ধ থেকে ভালোভাবেই কাজ করতে পেরেছে. খেয়াল করলে বোঝা যাবে বিশ্বযুদ্ধগুলো মূলত ইউরোপ কেন্দ্রিক হয়েছিল. তাই ইউরোপের জন্য নিচ মহাদেশে যুদ্ধ. কখনোই কাম্য নয়. ইউরোপের মাটিতে শেষ যুদ্ধ হয়েছে উনিশশো বিরানব্বই চুরানব্বই সালে. সাবেক যুব স্লামিয়ার মাটিতে যা বলকাম যুদ্ধ বলে পরিচিত. এরপর দীর্ঘ সময় বিশ্বের নানা স্থানে যুদ্ধ হলেও ইউরোপে ঐক্য ও শান্তির একটা রাজনীতির প্রাধান্য পেয়েছে ইউক্রেন ইস্যুতে তাই ঠিক যতটা সরব পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ব কিন্তু তার ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা যায় বিশ্বের অন্যান্য সংঘাত কবলিত দেশগুলোতে ইউক্রেনের রুশ আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা ও জনমত গঠনে পশ্চিমা মিডিয়ায় যে সড়ক প্রচেষ্টা ঠিক ততটাই অনীহা দেখা গিয়েছে ইসরাইল যখন ফিডিসিনে আকর্ষণ চলেন ইয়েমেনের সৌদি হামলার বিরুদ্ধে কিংবা মার্কিন প্রশাসনের আফগান যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিশ্ব গণমাধ্যমও যেন এক জোগা। যেখানে ফুটে উঠেছে বিশ্ব ব্যবস্থার প্রাচ্য বনাম পাশ্চাত্যের একটা দ্বন্দ্ব। কিন্তু কেন? এই কেন উত্তর পাওয়া যায় সিবিএস নিউজের সিনিয়র ক্রসপন্ডেন চার্লিডি আগাছার একটা বক্তব্য থেকে। দিস প্রেজেন্টস আব্দুল you know like your g seen আলাদা মনে করে ইরাকি বা অজ্ঞান জনতার তুলনায় ইউরোপিয়ান কেবল আগাছাই নন পশ্চিমাদের নীতি দেখে মনে হচ্ছে তারা এই কমনই ধারণা করেন পশ্চিমা গণমাধ্যম গুলো পাশ্চাত্য ভাব ধারায় উদ্ভ এ ছাড়াও বর্ণবাদ নীতি বা হোয়াইট সুপ্রিমিসি এর একটি বড় ভূমিকা দেখা যাচ্ছে এখানে পশ্চিমাদের এ ধরনের আচরণের পেছনে রয়েছে তাদের শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ এবং বর্ণবাদী চিন্তা চেতনা পশ্চিমারা যতই বৈচিত্রের কথা বলুক এই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে তাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে থেকে যাওয়া বর্ণবাদের আবারও প্রকাশ পেয়েছে ইউক্রেনের ডানপন্থী সংগঠনের উগ্র সদস্যরা গণমাধ্যমে মুক্তি যোদ্ধা হিসেবে প্রদর্শিত হচ্ছে.
ইউক্রেনের স্মরণার্থীরা যখন পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয়সহ তিন বছরের রেসিডেন্সি পারমিট পাচ্ছেন. একই সময় ভুমধ্য সাগরে কোস্টগার্ডের পুশব্যাক এর শিকার হয়ে ঠান্ডায় জমে মৃত্যুর মুখে পড়ে যাচ্ছেন শরণার্থীরা। দ্বিচারিতার এই ফিরিস্তি দিয়ে কখনোই শেষ হবার নয় ইউক্রেনকে তো ম্যাটোতে যোগ দিতে দেবেনই না পুতিন। পাশাপাশি পূর্ব ইউরোপ থেকে উনিশশো-সাতানব্বই সালের পর থেকে যেসব দেশ ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে সেসব দেশকে ন্যাটোর বাহিনী এবং সামরিক স্থাপনা অপসারণের দাবি জানিয়েছেন পুতিন । এমনকি রাশিয়ার সীমান্তের কাছে হামলা চালাতে সক্ষম এমন অস্ত্র মোতায়েন করা যাবে না বলে দাবি তুলেছেন তিনি । এর অর্থ ইউরোপ, পূর্ব ইউরোপ এবং বাল্টিক অঞ্চলে নেটোর কার্যক্রমে লাগাম টানতে হবে. রাশিয়ার জোর দিয়ে বলেছে কিএফ কে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে. আর রাশিয়ার এই দাবি কে মেনে নিতে পারে বলে মনে হচ্ছে না. কিন্তু বল এখনো রাশিয়ার কোর্টে. পুতিন যা চান সেটাই হবে সেখানে. কাজেই রক্তক্ষয়ী এই সংঘর্ষে আরো প্রাণ যাবে আরো সম্পদের ক্ষতি হবে দ্রব্যমূল্য বাড়বে. ভুক্তভোগী হবে গোটা পৃথিবীর মানুষ. যুদ্ধের হিংস্রতা থেকে এত সহজে আমাদের মুক্তি নেই.
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন